ভুটানে অনুষ্ঠিত হয়েছে চতুর্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন। হিমালয় কিংডম অব ভুটান চলতি মাসের ১-৪ অক্টোবর এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন সম্পন্ন করেছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর চলাকালীন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকার করণে বিগত ৩ বছরধরে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন বন্ধ থাকার পর এই বছর প্রথম নতুন করে শুরু হলো এই বৌদ্ধ সম্মেলন। “বৌদ্ধ ধর্মের আধুনিকতা” শিরোনামে ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪ দিন আন্তর্জাতিক এই সিম্পোজিয়াম চলে।
ফোরামে মূলত বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের চর্চা ও ঐতিহ্য উপস্থাপন, পরীক্ষা এবং আলোচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক এই সিম্পোজিয়ামে বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের বিশিষ্ট পণ্ডিত এবং অনুশীলনকারী সহ ভুটানে এবং ৩৭টি দেশের ৩০০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি, অতিথি, অংশগ্রহণকারী এবং বক্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। কিভাবে ২১ শতকেও বৌদ্ধধর্ম মানব সমাজে সৃজনশীলভাবে জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে চলচে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
>>ভারতে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন অনুুষ্ঠিত।
চারদিনের এই সমাবেশে বিশ্বজুড়ে সামাজিক, পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত পরিস্থিতির মধ্যে আধুনিক জীবনে বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের প্রেক্ষাপটের মূল বিষয়বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর একটি বিস্তৃত আলোচনা চলে। সমাবেশে জন্য লিখিত নথি এবং উপস্থাপনা বৌদ্ধ দর্শনের সাথে সমসাময়িক ইন্টারফেসকে স্পর্শ করেছে।
এখানে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে, মননশীলতা, ধ্যান, এবং বৌদ্ধ অনুশীলন; রাজনীতি এবং ভূরাজনীতি; স্বাস্থ্য এবং ভালোথাকা; এআই এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি; বাস্তুশাস্ত্র এবং পরিবেশ; সামাজিকতায় বৌদ্ধধর্ম; যোগনীতি, ভিক্ষুণী এবং নারীর ক্ষমতায়ন; বৌদ্ধধর্ম এবং শিল্পকলা।
ভুটানে সেন্ট্রাল মনাস্টিক বডি ঝুং ড্রাটশাং এবং ইন্টারন্যাশনাল বুড্ডিস্ট কনফেডারেশন, ভারতের সহায়তায় ভুটান স্টাডিজ এন্ড জিএনএইচ (সিবিএস) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সম্মেলনের তাৎপর্য সম্পর্কে বক্তৃতা করতে গিয়ে, CBS সভাপতি দাশো কর্ম উরা বলেন, ”বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম মানব অস্তিত্বের উপর একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। মানব সমাজ এবং তাদের প্রচেষ্টারয় অনুপ্রেরণা ও অন্তর্দৃষ্টির উৎস হিসাবে এটির অমূল্য ভূমিকা রয়েছে।”
তিনি আরে বলেন, “আজকের এই মহৎ অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক সেন্ট্রাল মনাস্টিক বডি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের ধারক ও বাহক। এটি বৌদ্ধধর্মের একটি মূর্ত রূপ, ধর্মীয় অনুশীলনে দক্ষ উপায় এবং জ্ঞানের সমন্বয়ে সর্বদা নিবেদিত প্রতিষ্ঠানটি। সেন্ট্রাল মনাস্টিক বডি’র অনেকগুলো শিক্ষা বিশ্বায়ন করা যেতে পারে আর এর জন্য দরকার আজকের মতো আরো অনেক আন্তর্জাতিক আয়োজন।
ইতোমধ্যে, ভুটানের উন্নয়ন ধারণার সাথে সম্পর্কিত Gross National Happiness (GNH) গবেষণা এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা ও সমন্বয় করার জন্য ভুটান সরকার CBS-কে দায়িত্ব দিয়েছে। স্থলবেষ্টিত এবং পূর্ব হিমালয়ের শীতল বাতাসে অবস্থিত, ভুটান ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্থান পেয়েছে। ২০২২ সালের জরিপমতে মাত্র ৭,৬৩,২৪৯ জন জনসংখ্যার দেশটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এবং স্বল্পতম শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। তবুও দেশটি টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখে অন্যতম সুখী দেশের তালিকায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছে।
সম্মেলনের প্রথম দিননের উপস্থাপনায় ছিল, বজ্রযান বৌদ্ধধর্মে মন-দেহের অনুশীলনের গবেষণার পরীক্ষা, পাশ্চাত্যে বজ্রযানের প্রকাশ, বজ্রযান পন্থার মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং দৈনন্দিন জীবনে বজ্রযান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সম্মেলনে ভারতের সিকিমের ৭১ বছর বয়সী প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফার জাময়াং দর্জি চাকিশার “বৌদ্ধ ক্যালিগ্রাফি: অ্যান এমার্জিং আর্ট” শীর্ষক একটি প্রদর্শনীও উপস্থাপন করেন। চাকিশার বিশ্বের দীর্ঘতম ১৬৫ মিটার ক্যালিগ্রাফি স্ক্রোলের রেকর্ডধারী। চাকিশার উল্লেখ করেন যে ক্যালিগ্রাফিক শিল্পের অনুশীলন একটি সুন্দর উপায় যা অনুশীলনকারীকে সমস্ত বৌদ্ধ শিক্ষার চূড়ান্ত প্রকৃতি উপলব্ধি করতে সহায়তা করতে পারে।
সম্মেলনের সময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
ভুটান, হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত। দেশটি দুই বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে একটি স্যান্ডউইচ মতো। ভুটানই বিশ্বের শেষ অবশিষ্ট একমাত্র বজ্রযান বৌদ্ধ দেশ। বজ্রযান আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এই প্রত্যন্ত ভূখণ্ডের চেতনা ও সংস্কৃতিতে মিশে রয়েছে। ভুটানের জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ বৌদ্ধ। বাকি ১৫ অংশের অধিকাংশ হিন্দু ধর্ম পালন করে।