বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত

বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত হয়েছে যথাযত মর্যদায়। শ্রীলঙ্কার বিপর্যস্ত সরকার রবিবার দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা উৎসব পালন করার অনুমতি দেওয়ার জন্য দেশব্যাপী কারফিউ তুলে নিয়েছে।

এর আগে গত ৯ মে (সোমবার) ক্ষমতাসীন দলের পদত্যাগের দাবীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর সশস্ত্র সরকারি বাহিনীর হামলা হলে জনরোশ চরম আকার ধারণ করে। পরে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই দিন সরকারি বাহিনীর হামলায় ৯ জন নিহত ও ২২৫ জন আহত হওয়ার খবর প্রচার করেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম গুলো।

শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসের পদত্যাগের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে বিক্ষোব্ধ জনতাকে কিছু দিন ঘরে থাকার অনুরোধ করেন এবং দেশ জুড়ে কারফিউ জারি করে। এই কারফিউ গত ১৪ মে (শনিবার পর্যন্ত বলবৎ থাকার পর ১৫ মে (রবিবার) গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ দিবস উপলক্ষ্যে তুলে নেওয়া হয়।

বর্তমান দায়ীত্বরত সরকার বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে দুই দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে এরপরে কারফিউ পুনরায় জারি করা হবে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট

এই পর্যন্ত দ্বীপ রাষ্ট্রটি ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রেকর্ড পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি, বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিসেবা, জ্বালানি তেল, খাদ্য সামগ্রী এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেশটিকে চরম ভাবে বিপদে ফেলেছে।

বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত

শ্রীলঙ্কার রুপি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ-কার্যকরি মুদ্রায় পরিণত হয়েছে, এপ্রিলে ঐতিহাসিক সর্বনিম্নে মূল্যে নেমে গেছে শ্রীলঙ্কান রুপির দান। এমনকি রাশিয়ান রুবেলের তুলনায় কম পারফর্ম করছে। গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে দেশটিতে, যার ফলে দেশটি খাদ্য বা জ্বালানীর মতো মৌলিক প্রয়োজনীয়তা সামগ্রী আমদানি করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে।

এর মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহে শপথ নিয়েছেন, যিনি এর আগের পাঁচ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবেলার জন্য রনিল বিক্রমাসিংহে নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করেছেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বিক্রমাসিংহে ইতিমধ্যেই চীন, ব্রিটেন, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সাথে আর্থিক সাহায্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। গত সপ্তাহে, তিনি পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে ঘাটতি আরও খারাপ হবে, প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে যাবে।

এদিকে বুদ্ধপূর্ণিমা পালনের অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও, সরকার শ্রীলঙ্কার প্রাচীন কুরাগালা বৌদ্ধ কমপ্লেক্সে নির্ধারিত উৎসবের জন্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা বাতিল করে।

বৌদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সরকারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কুরাগালা মন্দিরে এই বছরের রাষ্ট্রীয় উৎসব করছি না “

তিনি আরো বলেন, ”বৌদ্ধরা তাদের নিজস্ব উদযাপন করতে স্বাধীন, তাদের কোন ধরনের বাঁধা দেওয়া হয়নি, গণ ধ্যান এবং ধর্ম আলোচনার মতো গণজমায়েত বিশিষ্ট্য অনুষ্ঠানেও বৌদ্ধদের করতে দেওয়া হয়েছে।”

শ্রীলঙ্কায় জনসংখ্যা

শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধধর্ম। দেশটি ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ২০১২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে জনসংখ্যার প্রায় ৭০.২ শতাংশ থেরবাদ বৌদ্ধ। শ্রীলঙ্কার ১২.৬ শতাংশ হিন্দু, মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৯.৭ শতাংশ, খ্রিস্টান ৭.৪ শতাংশ এবং অন্যান্য ০.০৫ শতাংশ।

রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বৌদ্ধধর্ম সংবিধানের অধীনে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পেলেও শ্রীলঙ্কা সংবিধানে অন্যান্য ধর্মের সকল নাগরিকের জন্য ধর্মের স্বাধীনতা এবং সমতার অধিকারেরও বিধান রয়েছে।

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!