আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান, সম্মানিত আমেরিকান শান্তি-নির্মাতা, মনোবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং বৌদ্ধধর্মীয় কাজে নিযুক্ত বৌদ্ধ ডক্টর পলা গ্রীন মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। অনিচ্চ বত সাংখারা…..। গত ২১ ফেব্রুয়ারি (সোবার) ক্যান্সারজনিত জটিলতার কারণে মারা যান।
ডঃ গ্রীন, করুণা সেন্টার ফর পিসবিল্ডিং এনজিও-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক, একজন মনোবিজ্ঞানী এবং শান্তি শিক্ষাবিদ। তিনি আন্তঃগোষ্ঠীয় দ্বন্দ্ব সমাধানের পরামর্শদাতা হিসাবে ৪০ বছর ধরে কাজ করে গেছেন। তিনি ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ দ্য ফেলোশিপ অফ রিকনসিলিয়েশন এবং ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অফ এনগেজড বুড্ডিস্ট (আইএনইবি) স্টিয়ারিং কমিটির সাথেও যুক্ত ছিলেন।
আইএনইবি-এর নির্বাহী সচিব সোমবুন চুংপ্রাম্প্রী পলার মৃত্যু খরব নিশ্চিত করে বলেন, “পলা গ্রিন হঠাৎ করেই শেষ পর্যায়ের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল, যা তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি গত রাতে (২১শে ফেব্রুয়ারি) মারা গেছেন, এটা আমাদের খুবই দুঃখজনক খবর। পলা বহু বছর ধরে বিশ্বে এবং আমাদের বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে নিযুক্ত রেখে অবদান রেখেছেন।”
ডঃ গ্রীন মধ্যপ্রাচ্য এবং বসনিয়ায় তার শান্তি-প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে ছিলেন। ২০০৯ সালে আনসাং হিরোস অফ কম্যাশন অ্যাওয়ার্ডের একজন হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে দালাই লামা তাকে প্রদান করেছিলেন। সে বছর দ্য আনসাং হিরোস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় যারা, প্রেমময়-দয়া এবং অন্যদের প্রতি সেবার মাধ্যমে, তাদের সম্প্রদায় এবং আমাদের বিশ্বকে একটি সুন্দর পৃথিবী হিসেবে তৈরী করতে কাজ করেছে।
তিনি ২০১৮ সালে অ্যালায়েন্স ফর পিস বিল্ডিং থেকে ইউএস পিস বিল্ডিং এর প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন; ২০১৫ সালে কিন ইউনিভার্সিটি থেকে অসামান্য মানবাধিকার কর্মী পুরস্কার; ২০১২ সালে সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য মনোবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে শান্তি ও বিচারের মনোবিজ্ঞান পুরস্কার; এবং ২০১০ সালে দ্য সিম্পোজিয়াম ফর এনগেইজড বুড্ডিজম থেকে দ্য লিডারশীপ এন্ড সার্ভিস এজ এ পিইসমেকার এওয়্যার্ড জয় করেছিলেন।
ডঃ গ্রীন ১৯৯৪ সলে প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাসাচুসেটস-ভিত্তিক করুনা সেন্টার ফর পিস বিল্ডিং (KCP)। KCP একটি অলাভজনক সংস্থা যা আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপান্তর ঠেকানো, আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংলাপ গড়ে তোলা এবং পুনর্মিলনের জন্য কাজ করে। বৌদ্ধধর্মের প্রতি দূর্বলতার কারনেই “করুণা” শব্দটি বাছায় করেছেন তার সংস্থার জন্য। KCP আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকা জুড়ে ৩০ টিরও বেশি দেশে সক্রিয় কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দিয়ে সংঘর্ষ-পরবর্তী পুনর্মিলনকে সহজতর করতে ভূমিকা পালনে করেছে। KCP ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস এবং ফান্ড ফর পিস এর সাথে সহযোগিতায় কাজ করেছে।
KCP-এর একটি স্মারক নোটিশে বলা হয়েছে, “পলা সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি প্রেরণাদায়ী শক্তি এবং শান্তির জন্য একটি অনুঘটক হিসেবে থাকবেন, তিনি শান্তি-নির্মাতা প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন যাতে তারা সমবেদনা, সাহসিকতা এবং ন্যায়বিচারের গভীর অনুভূতির সাথে জটিল বিভাজনের মধ্যে সেতু তৈরি করতে পারে। তার অনেক উত্তরাধিকার এখনো পৃথিবীজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন যাদের সাথে তিনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। তার সংগ্রামী জীবনে কাজের মাধ্যমে তিনি যে বিস্তৃত সম্প্রদায় গড়ে তুলেছেন- যার মধ্যে রয়েছে করুণা সেন্টার বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার নজির সৃষ্টি করেছেন।”
আরো পড়ুন>>
- একুশে পদকে ভূষিত হলেন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো।
- রামুতে বৌদ্ধ যুবকের লাশ উদ্ধার।
- এসএসসি ২০২১: বৃত্তিতে বৌদ্ধ শিক্ষার্থীদের সাফল্য।
- পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে আরেকটি সুন্দর ফুল।
- বুদ্ধের অনাত্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ।
- আজান ব্রহ্মবংশ মহাথেরো।
- বুদ্ধের সার্বজনীন উপদেশ “চারি ব্রহ্ম বিহার”।