ইংল্যান্ডের ইয়র্ক বৌদ্ধরা নতুন ধর্ম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করছে। দুই বছর আগে ইয়র্ক শহরের বৌদ্ধরা একটি ছোট ধর্ম কেন্দ্র খোলেছিল। বর্তমানে ইয়র্কে শহরে বৌদ্ধধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার পর আরো বড় আকারে বৌদ্ধ সেন্টার খোলার পরিকল্পনা করছে শহরের বৌদ্ধ বাসিন্দারা।
ইয়র্ক পরিচিতি
ইয়র্ক হল উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের একটি প্রাচীর ঘেরা শহর যা প্রাচীন রোমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে প্রাচীন অনেক স্থাপনা ও নির্দশন আছে। সম্প্রতি এই শহরে বৌদ্ধধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানকার নব দীক্ষিত বৌদ্ধদের ত্রিরত্ন বৌদ্ধ নামে ডাকা হয়।
ইয়র্ক বৌদ্ধ কেন্দ্র পরিকল্পনা
নতুন এই বৌদ্ধ কেন্দ্রটি ঐতিহাসিক ইয়র্ক ক্যাসেল মাঠের ঠিক পূর্বে ওয়ালমগেটের রাস্তার ধারে প্রতিষ্টিত হবে। এটি পূর্ববর্তী কেন্দ্রের তুলনায় অনেক বড় হবে। নতুন বৌদ্ধধর্ম অনুশীলনকারীদের জন্য আরও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে এখানে।
নব স্থাপিত এই বৌদ্ধ কেন্দ্রটি এই বছরের শেষের দিকে জনসাধারণের জন্য উন্মোক্ত করা হবে। এই কেন্দ্রটি সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে একটি বানিজ্যিক কফি শপকে বিহারের অংশে রূপান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র সূত্র। মূলত বৌদ্ধ শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে কফি শপকে বৌদ্ধ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার জন্য দান করেছে দোকানের মালিক।
পরিকল্পনার ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “এই জায়গাটি বৌদ্ধ উপাসনা, ধ্যান এবং বৌদ্ধ শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। এখানে নতুন ও পুরাতন সকল বৌদ্ধদের সকল প্রকার ধ্যান শিক্ষা ও সাধারন বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা করা হবে।”
কেন্দ্রটি রক্ষণা বেক্ষণের জন্য কোন কর্মী নিয়োগ করা হবে না। স্থানীয় ত্রিরত্ন বৌদ্ধরাই স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে এটির রক্ষণা বেক্ষণ করবে বালে জানা গেছে। প্রতিদিন ৩৫ জনের একটি টিম এখানে ধ্যান, পূজা ও ধর্ম অধ্যায়নকারীদের সেবার কাজে নিয়োজিত থাকবে।
কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন শাক্যপদ বলেছেন, ”বৌদ্ধ কেন্দ্রটির আকার বৃদ্ধি হওয়ার কারণে আগের তোলনায় বেশি ইভেন্ট ও ক্লাস আয়োজন করার সুযোগ হবে ফলে আরো বেশি পূণ্যার্থী ধ্যান ও ধর্ম শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে।”
ইয়র্ক বৌদ্ধ সেন্টারের ইতিহাস
ইয়র্ক বুড্ডিস্ট সেন্টারটি ত্রিরত্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংগ যা পূর্বে ফ্রেন্ডস অফ দ্য ওয়েস্টার্ন বুডিস্ট অর্ডার (এফডব্লিউবিও) পরিচিত ছিল। এটি ১৯৬৭ সালে ডেনিস লিংউড নামের এক ইংরেজ প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন সময় তিনি শ্রীলংকায় অবস্থান করেন। সেখানে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে তিনি ভারতে এসে বিভিন্ন ধর্ম গুরুর সাথে দেখা করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ভিক্ষু ধর্মে দীক্ষিত হয়ে সংঘরক্ষিত নাম ধারণ করেন। সেই বছরেই তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ”ফ্রেন্ডস অফ দ্য ওয়েস্টার্ন বুডিস্ট অর্ডার (এফডব্লিউবিও” প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপে এফডব্লিউবিও’র ১০০টির বেশি অনুসরণকারী গোষ্ঠী রয়েছে। সর্বাধিক সংখ্যক অনুসরণকারী দেশ ভারত, যেখানে এটি ত্রিরত্ন বৌদ্ধ মহাসংঘ (TBM) নামে পরিচিত।
চেয়ারম্যান শাক্যপদ বলেন, “ইয়র্ক বৌদ্ধ কেন্দ্র হল ত্রিরত্ন সম্প্রদায়ের একটি অংশ, সারা বিশ্বে এর কেন্দ্র রয়েছে। আমরা এমনভাবে বৌদ্ধধর্ম অনুশীলন করি যাতে পশ্চিমাদের আমাদের কাছে আরও সহজলভ্য মনে হয়ে। এখানে ভিক্ষু না হয়েও ধর্ম অনুশীলন করার অনুমতি আছে।”
তিনি বলেন, “১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রত্যেককে যেকোন ক্লাসে যোগদান করতে আমরা স্বাগত জানাই। ধর্ম অনুশীলন করতে বৌদ্ধ হতে হবে বা বৌদ্ধ হতে ইচ্ছুক হওয়ার দরকার নেই। আমরা কেবল সুখ অনুসন্ধিৎসুদের জীবনে আরও বেশি সুখ এবং তৃপ্তি পেতে সাহায্য করতে চাই। আমরা আমাদের ক্লাসের জন্য কোন ফি চার্জ করি না, তবে যারা অনুদান দিতে সক্ষম তাদের জিজ্ঞাসা করি।”
আরো পড়ুন>>
- মিয়ানমারে ৪ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যার অভিযোগ।
- মিডল ওয়ে এডুকেশনের নতুন ডিরেক্টর -লি।
- মগদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বুড্ডিস্ট স্ট্যাডিজের করুণ অবস্থা।
- বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখ।
- বৌদ্ধধর্মে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস।
- সপ্ত অপরিহনীয় (উন্নয়নমূলক) ধর্ম।