আমেরিকায় শ্রীলঙ্কার নতুন বৌদ্ধ মন্দির উৎসর্গ। উৎসর্গ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কান রাষ্ট্রদূত মাহিনা সামারাসিংহে। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত, মাহিনা সামারাসিংহে নতুন শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ মন্দিরটি উৎসর্গ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য গত ২৫ জুন ওহাইওর আকরনে ভ্রমণ করেন।
ক্লিভল্যান্ড বৌদ্ধ বিহার এবং ধ্যান কেন্দ্র নামে পরিচিত, মন্দিরটি বৌদ্ধদের থেরবাদ ঐতিহ্যে বিশ্বাসী ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। বিহারটিতে নিয়োজিত প্রধান ধর্মীয় গুরুদের মধ্যে আছেন, ভান্তে পেমারন্ত, ভান্তে পুন্না এবং ভান্তে মেত্তা।
অনুষ্ঠান চলাকালীন, রাষ্ট্রদূত সামারাসিংহে আকরনে বসবাসকারী অভিবাসীদের অতিথিপরায়ণতার জন্য প্রশংসা করেন। তার মন্তব্যে, সমরাসিংহে বলেন, “তারা এখানে (আমেরিকাতে) বাস করে, কিন্তু তারা তাদের ঐতিহ্য ভুলে যায়নি। আমি আশা রাখবো কোন দিন যেন শ্রীলঙ্কান ঐতিয্যকে তারা ভুলে না যায়।”
মন্দির বসবাসকারী ভিক্ষুদের সকলেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে জন্মগ্রহণকারী এবং উচ্চ শিক্ষিত। ভান্তে পেমারান্ত পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মীয় গবেষণায় পিএইচডি করেছেন, অন্যদিকে ভান্তে মেত্তা শ্রীলঙ্কার পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালি ভাষায় প্রথম শ্রেণীর সম্মান সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এই নতুন মন্দিরটি তৈরি হওয়ার আগে, এখানকার ভিক্ষুরা পিটসবার্গ বৌদ্ধ কেন্দ্রে থাকতেন এবং সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন।
আমেরিকায় ক্যাথলিক চার্চসে বৌদ্ধ বিহারে রূপান্তর
তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুসারে, নতুন মন্দিরটি বিনামূল্যে ভাবনা ক্লাস, পাবলিক বক্তৃতা, বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক উৎসব এবং যুব ক্যাম্পাস সহ ভিবিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করবে।
উৎসর্গ অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত ছাড়াও, আকরনের মেয়র ড্যান হোরিগান সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। উৎসর্গ অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ, বক্তৃতা এবং ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ আচার-অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নতুন মন্দির সম্পর্কে বলতে গিয়ে, হোরিগান বলেন, “আমি আনন্দিত-আসলে, আমি খুব আনন্দিত-আপনি এমন একটি স্থাপনার জন্য আমার আকরনকে বেছে নিয়েছেন।”
স্থানীয় বাসিন্দাদারও নতুন বিহার ব্যপারে দারুন খুশি। বব মিলেতি, একজন ব্যবসায়িক মালিক যিনি প্রিমো’স ডেলি পরিচালনা করেন, তিনি বলেন, ক্লিভল্যান্ড বৌদ্ধ বিহার এন্ড মেডিটেশন সেন্টারের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী আমাদের আদর্শ প্রতিবেশী। তারা অত্যান্ত চমৎকার, খুব শান্ত, স্নিগ্ধ এবং দয়ালু।”
ভার্নন ওডম বুলেভার্ড নামক স্থানে অবস্থিত প্রায় ৮,০০০ বর্গ মিটার জমিতে স্থাপিত মন্দিরটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিশেষ করে এই এলাকায় বসবাসকারী শ্রীলঙ্কান সম্প্রদায়ের ১৫০-২০০ পরিবার এর রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব পালন করবে।
ক্লিভল্যান্ড বৌদ্ধ বিহারের সেক্রেটারি, গামিনী সমরানায়েক বলেন, ”স্থানটি উত্তর-পূর্ব ওহাইও বেছে নেওয়ার একটি কারণ হল এখানে যথেষ্ট জমি রয়েছে যা বৃদ্ধি করা সম্ভব।” তিনি আরো বলেন, “এখানকার বায়ুমণ্ডল চারপাশ বৌদ্ধ বিশ্বাস এবং শিক্ষার অনুশীলনের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। এখানে ধ্যানের খুব সুন্দর পরিবেশ আছে, মূল বিহার এলাকার নয়-দশমাংশ একটি জঙ্গলযুক্ত এলাকা। এক বছর আগে যখন ক্লিভল্যান্ড বৌদ্ধ বিহারে জায়গাটি কেনা হয়, তখন এটি ১০০ ভাগ নিখুঁত ছিল না। আমরা নিজেরাই এটিকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছি।।”
শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ উপকূলের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। পূর্বে শ্রীলঙ্কা সিলন নামে পরিচিত ছিল। শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা প্রায় ২২ মিলিয়ন। দেশটির প্রধান ও রাষ্ট্রীয় ধর্ম হল বৌদ্ধ। দেশটি ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৮৩-২০০৯ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের ফলে অনেক মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়। এই সময় বেশিরভাগ শ্রীলঙ্কান বিশেষ করে ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০১৮ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, শ্রীলঙ্কায় জন্মগ্রহণকারী প্রায় ৫২,০০০ মানুষ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে।