আইবিসি এর অভিধর্ম দিবস পালিত: প্রাবারণা পূর্ণিমা ও অভিধর্ম দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে অভিধর্ম দিবস কনফারেন্স। গত ৯ অক্টোবর (রবিবার) ভারতের নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফেডারেশন (আইবিসি) এর আয়োজনে কনফারেন্সটি সম্পন্ন হয়। কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন ভারত সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিশ্ব বৌদ্ধ নেতৃবৃ্ন্দ।
গৌতম বুদ্ধ তার মাতৃদেবী মহামায়াকে অভিধর্ম দেশনা করে তাবতিংস স্বর্গ থেকে তিনমাস পর এই দিনে পৃথিবীতে ফিরে আসেন বলে এই দিনটিকে অভিধর্ম দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দিনটি প্রতিটি বৌদ্ধ প্রধান দেশে সরকারি ছুটির দিন। থেরবাদ বৌদ্ধরা চন্দ্র বছরের সপ্তম মাসের পূর্ণিমায় অভিধম্ম দিবস বা প্রবারণা পূর্ণিমা হিসেবে পালন করেন। দিনটি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস সমাপ্তির দিন হিসেবেও পালন করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে, নয়াদিল্লির গ্রেটার নয়ডায় অবস্থিত আইবিসি (International Buddhist Confederation) এবং গৌতম বুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক অভিধম্ম দিবস অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। সকালে বুদ্ধমুর্তির সামনে পুষ্পপূজার মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয় দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনটি শেষ হয়।
কনফারেন্সে ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইবিসির মহাসচিব ডঃ ধম্মাপিয়া মহাথেরো, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মায়ানমার সিতাগু ইন্টারন্যাশনাল বুড্ডিস্ট একাডেমির চ্যান্সেলর ড. আশিন নানিসারা। কনফারেন্সের বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রীলঙ্কান বৌদ্ধ ভিক্ষু ওয়াসাকাডুয়ে মাহিন্দাওয়ানসা মহানায়ক থেরো, বলেন, “আজ পবিত্র প্রবারণা পূর্ণিমার প্রাক্কালে, আমরা, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্প্রদায় এই গুরুত্বপূর্ণ উত্সবটি উদযাপন করতে ভারতে জড়ো হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি আগামীকাল বিশেষ করে মোদি সরকারের অধীনে, আমরা ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের একটি বড় পুনরুজ্জীবন দেখতে পাবো। বৌদ্ধধর্ম হলো বিশ্বব্যাপী করুণা ও সুখের বিষয়।”
গত বছর জাতিসংঘে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে শ্রীলঙ্কার এই ভিক্ষু বলেন, ”আমরা গতবছর জাতিসংঘে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া বক্তব্য শুনেছি, তিনি বলেছিলেন, ”বিশ্বকে সংঘাত ও সহিংসতা থেকে বাঁচাতে ভারত বিশ্ববাসীকে দিয়েছে গৌতম বুদ্ধকে। বুদ্ধের অংহিস নীতির মাধ্যমেই কেবল পৃথিবীকে সহিংসতা ও সংঘাতের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।”
ভিক্ষু মাহিন্দাওয়ানসা আরো বলেন, ”আমরা সবাই এই বৈশ্বিক মিশনের প্রশংসা করি। আমাদের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আইবিসি এবং ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।”
আইবিসির মহাসচিব ডঃ ধম্মাপিয়াও মোদির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আমাদের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বুদ্ধের শিক্ষা, শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তার ওপর জোর দেন। তিনি প্রায় সকল বক্তব্যে বলেন, যে ভারতই বিশ্বকে শান্তির বার্তা দিয়েছে। ভারতের সন্তান গৌতম বুদ্ধ বিশ্ব শান্তির প্রতীক। বুদ্ধের শিক্ষা অহিংসা, সাম্য, একতা ও সম্প্রীতির বার্তা। গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।”
প্রধান অতিথীর বক্তব্যে ভিক্ষু নানিসারা বলেন, “আমি খুব আনন্দিত, আজ সকালে সকলে মিলে অভিধর্ম অধ্যায়ন করে আমি পুলকিত। অভিধাম্মকে কীভাবে অধ্যয়ন করতে হয় সে সম্পর্কে আমার জ্ঞান সবার সাথে ভাগ করে নিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। অভিধম্ম যে কোন মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যে কোন ধর্মের জন্য এটি অনুসরণীয়। কারণ যখন কেউ অভিধম্ম অধ্যয়ন করবে, তখন সে বুঝবে ‘আমি কী, আমি কোথায়, আমার কী করতে হবে। এক কথায় অভিধম্ম অধ্যয়ন মানে আমি কী তা নিয়ে স্ব-অধ্যয়ন করা।
দিনটির প্রধান ইভেন্টগুলির মধ্যে “অভিধম্মার তাৎপর্য” এর উপর একটি প্যানেল আলোচনা, “ভারতে সাম্প্রতিক উন্নয়নে দ্য স্টাডিজ অফ অভিধম্মা” শীর্ষক একটি বই প্রকাশ এবং লুম্বিনিতে IBC-এর প্রকল্প নিয়ে একটি তথ্য চিত্র স্ক্রিনিং করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গতবছর (২০২১) অভিধম্ম দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে একই অনুষ্ঠানটি কুশীনগরের মহাপরিনির্বাণ বৌদ্ধ বিহারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কুশীনগরের জোড়া শালবৃক্ষতলেই গৌতম বুদ্ধ মৃত্যুবরণ বা মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হয়েছিল। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

আইবিসি এমন একটি সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ছাতার মতো কাজ করে। এটির সদর দফতর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুক্রমের পৃষ্ঠপোষকতার উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ব সংস্থা, জাতীয় ও আঞ্চলিক ফেডারেশন, মঠ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান সহ ৩২০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু আইবিসি’র সদস্য।