মিয়ানমারে শান্তির দূত হয়ে এসেছেন অর্হৎ মহা বোধি মিয়াং সিয়াড

উত্তর মায়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে মহা বোধি মিয়াং সিয়াড নামে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে দেখার জন্য হাজার হাজার জনতা ভিড় করছেন প্রতি দিন।  মিয়ানমারের জনগনের বিশ্বাস মহা বোধি মিয়াং সিয়াড অর্হৎ ফলে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের জনগণের জন্য আশা ও স্থিতিশীলতার শান্তির বাহক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন মহা বোধি মিয়াং সিয়াড। গত আট মাসেরও বেশি সময় ধরে ভয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছে দেশটির জনগন। সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের অভ্যুত্থানে এবং অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাত হওয়ার পর থেকে অশান্তি চলছে মিয়ানমারে।

এতো কিছুর মধ্যে শান্তির বাণী নিয়ে এসেছেন মহা বোধি মিয়াং সিয়াড। মহা বোধি মিয়াং সিয়াড সকলকে শান্তির ছায়াতলে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

দেশটির সকল মতাদর্শী জনগন প্রতি সকালে শ্রদ্ধেয় ভিক্ষুকে ভিক্ষা দেওয়ার জন্য জড়ো হয়। মহা বোধি মিয়াং সিয়াডকে এক ঝলক দেখার জন্য ক্রমবর্ধমান ভিড়ের সাথে জনসমাগমের সংখ্যা বেড়েছে, এই বিশ্বাসে যে তার উপস্থিতি মিয়ানমারের “তিনটি বিপর্যয়” থেকে মুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে: ১. সামরিক অভ্যুত্থান, ২. COVID-19 মহামারী, এবং ৩. জাতীয় অর্থনীতি।

Maha Bodhi Myaing Sayadaw

“আমি এখানে সিয়াডকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি কারণ, তিনি জনগণকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দিতে পছন্দ করেন। আমরা বিশ্বাস করি ভান্তে অর্হৎ ফলে অধিষ্টিত হয়েছেন।” বলেছেন ৪০ বছর বয়সী গৃহবধূ খাইং থিরি তুন। খাইং থিরি তুন মান্দালয় শহর থেকে পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে নিয়াধামে ভিক্ষু মহা বোধি মিয়াং সিয়াডকে দেখতে গিয়েছিলেন। (বার্মা নিউজ ইন্টারন্যাশনাল)

ফেব্রুয়ারীতে সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, জান্তা সরকার জনমতের উপর সহিংস ক্র্যাকডাউন জরুরী অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে ক্ষমতায় তার দখলকে সুসংহত করেছে। এর মধ্যে জান্তা সরকার দেশের সম্মানিত ভিক্ষু সংঘকে হেয় প্রতিপন্ন করতেও কুন্ঠাবোধ করেনি। এই পর্যন্ত অন্তত ২৩ জন ভিক্ষুকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কিছু বার্মিজ বৌদ্ধ বিশ্বাস করেন যে বর্ষাবাস শুরুর দিকে মহা বোধি মিয়াং সিয়াড-এর আবির্ভাবের ফলে এই সাগাইং অঞ্চলে শান্তি নেমে এসেছে। কিছু দিন আগেও এই অঞ্চলে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিদ্রোহী ও সেনাদের মধ্যে চরম সহিংসতা দেখা গিয়েছল। এই বছরের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াইটাও এখানেই হয়েছিল। কিন্তু মহা বোধি মিয়াং সিয়াড আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে এই এলাকায় তেমন কোন সহিংসতা দেখা যায়নি।

ট্যাক্সি ড্রাইভার কায়থি বলেন, “সিয়াড তীর্থযাত্রীদের নিমন্ত্রণ (ফাং) গ্রহণ করার পর থেকে আমাদের অঞ্চল স্থিতিশীল হয়,”। কায়তি প্রতিদিন অনেক তীর্থযাত্রীদের নিয়ে মহা বোধি মিয়াং সিয়াড এর বিহারে নিয়ে আসেন।

২০১৪ সালের আদমশুমারি তথ্য অনুসারে, বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ সমগ্র বার্মিজ সমাজে পূজনীয়, মায়ানমারে (পূর্বে বার্মা) একটি প্রধানত থেরাবাদ বৌদ্ধ দেশ। প্রায় ৬০ মিলিয়ন লোকের জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ বৌদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত।

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ২০০৭ সালে পূর্ববর্তী সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। যা জাফরান বিপ্লব নামে পরিচিত, জাফরান বিপ্লব তৃণমূল সমর্থনকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছিল। মিয়ানমারে প্রায় ৫০০,০০০ এর বেশি বৌদ্ধ ভিক্ষু আছে বলে অনুমান করা হয়। প্রধানত ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয় শহরগুলোর আশেপাশে প্রায় ৭৫,০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষুর আনাগোনা অনুমান করা যায়।

মাহ বোধি মিয়াং সিয়াড এর একজন সেবক খিন মং উইন বলেন, “সিয়াড রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলেননি, তিনি তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছেন।” (বার্মা নিউজ ইন্টারন্যাশনাল)

মান্দালয় থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী মো মো লুইন বলেন, “সিয়াড অবশ্যই তীর্থযাত্রীদের গ্রহণ করার কারণ আছে, তিনি মানুষের সামনে হাজির হয়েছেন যাতে তারা শান্তিপূর্ণ এবং বিপদমুক্ত বোধ করতে পারে।” (বার্মা নিউজ ইন্টারন্যাশনাল)

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!