জাপানের নোবেল খ্যাত নিয়ানো পিস ফাউন্ডেশন আজ ৩৮তম নিওয়ানো শান্তি পুরষ্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেছে। এই বছর নিয়ানো শান্তি পুরষ্কারে ভুষিত হয়েছেন তাইওয়ানীয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীনি শ্রীমতি শিহ চাও-হুই। যিনি ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী সামাজিক কর্মী, বৌদ্ধ ব্যক্তিত্ব, পণ্ডিত এবং লেখক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
শিহ চাও-হুই পুরষ্কার গ্রহণকালে বলেন, “এই বছরের নীয়ানো শান্তি পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়ে আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি।” “কয়েক দশক ধরে, ফাউন্ডেশনটি শান্তি বিকাশের জন্য এশিয়া এবং বিশ্বজুড়ে এক স্বপ্নদর্শী নেতার ভূমিকা পালন করছে। যারা আমাদের গ্রহবাসীর সুস্থতা ও সম্প্রতির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন তাদের সাথে বসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমি আমার সমস্ত নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টার সাথে এই উত্তরাধিকারকে পরিচালনা করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও শপথ গ্রহণ করছি।”
মুক্তি, ক্ষমতায়ন এবং বৌদ্ধ মমত্ববোধের জন্য অগ্রণী কণ্ঠ সম্মানীতা চাও-হুই এশিয়া এবং এর বাইরেও একজন বিশিষ্ট মহিলা পণ্ডিত, দুই ডজনেরও বেশি বই এবং ৭০ টিরও বেশি গবেষণাপত্রের লেখকীকা।
Life Conservationist Association এর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে, শ্রীমতি চাও-হুই পশুপাখির অধিকার আইন সম্পর্কিত একটি বক্তব্য সরকারে কাছে পেশ করেন এবং প্রকৃতির বন্যজীবন সংরক্ষণ সম্পর্কিত অসংখ্য পত্রিকা রচনা করেছেন। তিনি সমকামী বিবাহের সোচ্চার সমর্থক এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির সকল স্তরে মহিলাদের বিচরণকে সমর্থন করার আন্দোলনের মূল ব্যক্তিত্বও ছিলেন।
নিয়ানো শান্তি পুরষ্কার বিজয়ীকে দেওয়া হয় একটি পদক, একটি প্রশংসাপত্র এবং ২০ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (১৮৩,০০ মার্কিন ডলার) নগদ অর্থ। বুধবার (২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর ২ টায় জাপানে মহামারী সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এই পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
কে এই চাও-হুই?
শ্রীমতি চাও-হুই ১৯৬৫ সালে মায়ানমারের ইয়াঙ্গুন শহরে (পূর্বের রাঙ্গুন, বার্মা) একটি চীনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কমিউনিজমের উত্থানের সময় তার পরিবার চীনের গুয়াংডং প্রদেশ থেকে পালিয়ে মিয়ানমারে আশ্রয় নিয়েছিল। তার বয়স যখন আট বছর তখন তার পরিবার তাইওয়ানে চলে আসে এবং সেখানেই তার লেখা-পড়া ও ভাল ছাত্রী হিসেবে বেড়ে ওঠেন। তাইওয়ান আন্তর্জাতিক নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর চাও-হুইকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীনি হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিল।
১৯৯৪ সালে, ভেন. চাও-হুই “ফু জেন ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে হুয়ান চুয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় অধ্যয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন Research Centre for Applied Ethics যা তিনি নিজে পরিচালনা করেন।
ভেন চাও-হুই Buddhist Hong Shih College-এ স্নাতক অধ্যয়নের ডিন হিসাবেও নিযুক্ত ছিলেন। তিনি হুয়ান চুয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মীয় অধ্যয়ন বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি পশু-পাখির অধিকারের উপর জোর দিয়ে বৌদ্ধ দর্শন এবং নীতিশাস্ত্র শিক্ষা দেন। ২০০৭ সালে, তিনি আন্তঃসংস্কৃতিক সংলাপে অসামান্য অবদানের জন্য ৪৮ তম চীনা সাহিত্য ও আর্টস মেডেল পেয়েছিলেন এবং ২০০৯ Outstanding Women in Buddhism Award পেয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অফ এনগেজড বুড্ডিস্ট (আইএনইবি) এর আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা।
নিয়ানো পিস ফাউন্ডেশন
নিক্কিও নিওয়ানো (১৯০৬-৯৯) ১৯৭৮ সালে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “নিয়ানো পিস ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি জাপানের রিশো কোসে কাই বৌদ্ধ সংগঠনের প্রথম সভাপতি ও সহ-প্রতিষ্ঠাতাও।
ফাউন্ডেশনটি গবেষণা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং দর্শনের ও অন্যান্য ক্রিয়াকলাপকে উৎসাহিত করে। ১৯৮৩ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়ানো শান্তি পুরষ্কার প্রদান করে আসছে “নিয়ানো পিস ফাউন্ডেশন”।
প্রতি বছর, নিয়ানো পিস ফাউন্ডেশন বিশ্বের ১২৫টি দেশ থেকে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থাগুলিকে তাদের দৃষ্টিতে সর্বাধিক জ্ঞানী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য অনুরোধ করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাতজন ধর্মীয় নেতার সমন্বয়ে নিওয়ানো শান্তি পুরষ্কার কমিটি গঠন করা হয়। মনোনয়ন প্রাপ্তদের কঠোরভাবে স্ক্রিন করার পর বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য মনোনয়ন প্রাপ্ত ও বিজয়ী সবাই শান্তি এবং আন্তঃধর্মীয় সহযোগিতা আন্দোলনের সাথে জড়িত।
এর আগে পুরষ্কার প্রাপ্তদের মধ্যে ২০২০ সালে ৩৭ তম পুরষ্কার জিতেন কোরিয়ান সিওন (জেন) মাস্টার ভেন পম্পনুন সুনিম; ২০১১ সালে এই পুরষ্কার জিতেছিলেন থাই সামাজিক কর্মী এবং International Network of Engaged Buddhists এর প্রতিষ্ঠাতা সুলাক শিবরক্ষ; ২০০৭ সালে Buddhist Compassion Relief Tzu Chi Foundation এর প্রতিষ্ঠাতা তাইওয়ানী বৌদ্ধ সন্নাসীনি চেং ইয়েন; ১৯৯৮ সালে এই পুরষ্কার লাভ করেন কম্বোডিয়ান ভিক্ষু এবং শান্তি কর্মী ভেন মহা ঘোসানন্দ।
আরো পড়ুন>>
- বাংলাদেশ যদি ভুটান হতো!
- জৈনধর্মমত ও বুদ্ধের আপত্তি।
- শীর্ষ পাঁচে বৌদ্ধ অভিনেত্রী।
- চারটি প্রধান ধর্মীয় গুরুদের সাথে অনলাইনে আলোচনা সভা।