বুদ্ধ তাঁর প্রধান সেবক আন্দকে বলেছিলেন, “আমার পরিনির্বানের পর দেশিত ধর্মের ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র শিক্ষাপদ সমূহ সংঘ ইচ্ছা করলে সমুচ্ছেদ করতে পারবে।
এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মিলিন্দপ্রশ্ন গ্রন্থে রাজা মিলিন্দ নাগসেন ভান্তেকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ছিলেন। নিচে বিষয়টি মিলিন্দপ্রশ্ন গ্রন্থের সদৃশ তুলে ধরা হলো।
“ভন্তে নাগসেন! ভগবান ইহাও বলিয়াছেন-‘ভিক্ষুগণ! আমি জানিয়াই ধর্মোপদেশ করি, না জানিয়া নহে।’ পুনরায় বিনয় প্রজ্ঞপ্তির সময় তিনি এইরূপ বলিয়াছেন- ‘আনন্দ! আমার অবর্তমানে সংঘ ইচ্ছা করিলে ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র শিক্ষাপদগুলি সমুচ্ছেদ করিতে পারে।’
ভন্তে নাগসেন! তবে কি তিনি ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র শিক্ষাপদগুলি ভুলবশতঃ নির্দিষ্ট করিয়াছিলেন? অথবা না জানিয়া নির্দিষ্ট করিয়াছিলেন? যাহা ভগবান নিজের অবর্তমানে ছোটখাট নিয়মগুলি সমুচ্ছেদ করাইতেছেন?
ভন্তে! যদি ভগবান বলিয়া থাকেন যে‘ভিক্ষুগণ! আমি স্বয়ং জানিয়া ধর্মদেশনা করি, না জানিয়া নহে‘ তাহা হইলে‘আনন্দ! আমার অবর্তমানে সংঘ ইচ্ছা করিলে ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র শিক্ষাপদগুলি সমুচ্ছেদ করিতে পারে’ এই বাক্য মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়। আর যদি তিনি এইরূপ অনুমতি বস্তুত দিয়া থাকেন তবে এই বাক্য মিথ্যা প্রতিপন্ন হয় যে-‘আমি জানিয়াই ধর্মদেশনা করি, না জানিয়া নহে।’
ভন্তে! ইহাও সুক্ষ্ম, নিপুণ, গভীর এবং জটিল উভয়কোটিক প্রশ্ন, তাহা আপনার সম্মুখে উপস্থিত করা হইয়াছে। তাহাতে জ্ঞানবল-বিস্তার প্রদর্শন করুন।”
“মহারাজ! ভগবান উপরি উক্ত উভয় বিষয় বলিয়াছেন- ‘ভিক্ষুগণ! জানিয়াই আমি ধর্মোপদেশ করি, না জানিয়া নহে’ এবং বিনয় প্রজ্ঞপ্তির সময় যে তিনি বলিয়াছেন‘আনন্দ! আমার অবর্তমানে সংঘ ইচ্ছা করিলে ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র শিক্ষাপদ সমূহ সমুচ্ছেদ করিতে পারে।’
কিন্তু মহারাজ ভিক্ষুদিগকে পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত তিনি বলিয়াছেন যে তাঁহার দ্বারা ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র শিক্ষাপদ সমূহ পরিবর্জনের অনুমোদন জ্ঞাপিত হইলেও তাঁহার অবর্তমানে শ্রাবকগণ তাহা বর্জন করিবে কিংবা সগৌরবে পালন করিবে।
মহারাজ! কোন চক্রবর্তীরাজা আপন পুত্রদিগকে বলেন- ‘প্রিয় পুত্রগণ! এই বড় সাম্রাজ্য চতুর্দিকে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত, আমাদের যত সেনাদল আছে তদ্বারা ইহা রক্ষা করা দুষ্কর। সুতরাং বৎসগণ! আমার অবর্তমানে তোমরা প্রত্যন্ত দেশগুলি পরিত্যাগ করিও।’
মহারাজ! তখন কি কুমারগণ পিতার অবর্তমানে হস্তগত সাম্রাজ্যর সেই প্রত্যন্ত দেশগুলি ছাড়িয়া দিবেন?”
“না, ভন্তে! রাজা অপেক্ষা রাজপুত্রগণ অধিকতর লোভী হন। তাঁহারা রাজ্যলোভে অতঃপর দ্বিগুণ, ত্রিগুণ জনপদ অধিকার করিবেন। তাঁহারা কি হস্তগত জনপদ ছাড়িতে পারেন?”
“মহারাজ! সেইরূপেই তথাগত ভিক্ষুদিগকে পরীক্ষা করিবার নিমিত্তই ইহা বলিয়াছেন। কিন্তু মহারাজ! বুদ্ধ-পুত্রগণ দুঃখমুক্তির নিমিত্ত ধর্মাভিলাষী হইয়া তদুত্তর আরও আড়াইশত শিক্ষাপদ পালন করিবেন। কিন্তু স্বাভাবিক নির্দিষ্ট বিনয়বিধি কিভাবে ত্যাগ করিতে পারেন?”
“ভন্তে নাগসেন! ভগবান যাহা বলিয়াছেন‘ছোটখাট নিয়মগুলি’ এই সম্বন্ধে জনগণ বিভ্রান্ত, বিমতিগ্রস্ত ও সংশয়াপন্ন হইয়াছেন যে ক্ষুদ্র শিক্ষাপদগুলি কি আর অনুক্ষুদ্র শিক্ষাপদগুলিই বা কী?”
“মহরাজ! ‘দুক্কট আপত্তি’ (বিনয় পরিভাষা, দুষ্কৃত) ক্ষুদ্র শিক্ষাপদ আর‘দুর্ভাষিতা আপত্তি’ অনুশিক্ষাপদ। এই দুই জাতীয় আপত্তিগুলি ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র শিক্ষাপদ। কিন্তু মহারাজ! প্রথম সংগীতিতে প্রাচীন মহাথেরগণও এ বিষয়ে অসম্মত হইয়াছেন। তাঁহারাও একমত হইয়াছেন যে এই প্রশ্ন ভগবান কর্তৃক ধর্মসংস্থিতির পর্যায়ে উপদিষ্ট হয় নাই। (পরীক্ষার নিমিত্তই কথিত হইয়াছে)।”
“ভন্তে নাগসেন! আপনি আজ চির-প্রচ্ছন্ন জিন রহস্যকে আধুনিক জগত সমক্ষে বিবৃত ও প্রকাশ করিলেন।”
আরো পড়ুন>>