থাইল্যান্ডের কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে যোগ দিচ্ছেন। কারন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে সম্প্রতি সংক্রমণ দ্রুত বর্ধিত হচ্ছে যাকে সংক্রমনের তৃতীয় তরঙ্গ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ, কোভিড পরীক্ষা পরিচালনা, এমনকি মৃতদেহ শ্মশানে পরিবহনের জন্য সমগ্রদেশে ভিক্ষুদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
থাইল্যান্ড SARS-CoV-2 সংক্রমণের তৃতীয় তরঙ্গ শুরু হয়েছে যা প্রথম ১ এপ্রিল চিহ্নিত হয়। নতুনভাবে থাইল্যান্ডে ৬৪৩৫৫২ কোভিড-19 রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারী গণনা অনুসারে, যাদের মধ্যে ৪২৮,৩৮০ আক্রান্ত সুস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে, ৪ আগস্ট কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জন আক্রান্ত ব্যাক্তি মারা গেছেন ও ২০,২০০ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছিল।
দক্ষিণ-পশ্চিম ব্যাংককের নদীর তীরের এক বৌদ্ধ বিহার ওয়াট সুথী ওয়ারারামের ৩৩ বছর বয়সী অধ্যক্ষ ফ্রা মহাপ্রোমফং বলেন, “অনেক থাই এখনও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দ্বারা উপেক্ষিত।” ২১ জুলাই থেকে ভিক্ষুরা থাই রাজধানীর দরিদ্র অঞ্চল পরিদর্শন করছেন। প্রকৃতই যারা অভাবী তাদের কাছে অক্সিজেন, খাদ্য এবং চিকিৎসা সরবরাহ করছেন এবং পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের মতো কাজগুলোও করছেন। তিনি আরও বলেন, “আমরা যাদের কাছে আসি তাদের সবার যত্ন নিই।” (ব্যাংকক পোস্ট)
ওয়াট সুথী ওয়ারারাম অনেকগুলি বিহারের মধ্যে একটি যাকে কোভিড রোগীদের জন্য আইসোলেশন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। এখানে ডাক্তার এবং নার্সরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সাথে এক হয়ে কাজ করছেন।
ফ্রা মহাপ্রোমফং বলেন, “ভিক্ষুরা মানুষের অনুদানের উপর নির্ভর করেই বাঁচতে সক্ষম কারণ আমরা মানুষের অনুদান গ্রহণ করেই বেঁচে থাকি, আমাদের ফেরত দেওয়ার এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। কমপক্ষে, আমরা তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে উত্সাহিত করতে পারি। (ব্যাংকক পোস্ট)
সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায়, থাইল্যান্ড সরকার গতকাল থেকে আরও দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন বাড়িয়েছে। নতুন করে আরও ১৬ টি প্রদেশ সর্বোচ্চ ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে উচ্চ ঝুকির তালিকায় বৃহত্তর ব্যাংকক সহ ২৮ টি রাজ্যের ৭৬টি প্রদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেখানে থাইল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার ৪০% বসবাস করে।
উত্তর ব্যাংককের নদী উপকূলীয় ওয়াট চিন ওয়ারারাম উরাভিহার্নের ভিক্ষুরা অবহেলিত দুর্বল থাইদের সাহায্য করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ফ্রা সুপর্নচিতমো শ্মশানে মৃতদেহ পরিবহনের গুরুতর ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন,“আমি এখানে ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক। যদি আমি ভাইরাসে সংক্রমিতও হই তাহলে আমার কোন দুঃখ ছাড়াই এটি গ্রহণ করতে প্রস্তুত”। তিনি বলেন, “আমি যখন এই কাজে অংশ গ্রহণ করছিলাম তখন আমার মাথায় এটা ছিল না আমি এরকম কিছু করবো, কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে সাহস যোগিয়েছে, এইরকম পরিস্থিতির সাথে প্রত্যেকের সাহায্যের হাত দরকার এবং আমি এখানে থাকতে পেরে গর্বিত।” (ব্যাংকক পোস্ট)
থাইল্যান্ড একটি প্রধানত থেরবাদা বৌদ্ধ দেশ। ২০১৫ সালের সরকারি আদমশুমারি তথ্য অনুযায়ী দেশটির ৬৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৯৪.৫ শতাংশ বৌদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিতে প্রায় ৪০,০০০ বৌদ্ধ মন্দির এবং প্রায় ৩০০,০০০ ভিক্ষু রয়েছে।
আরো পড়ুন>>
- ডোগি পর্বতে শাক্যমুনি বুদ্ধ মুর্তি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু।
- করোনা আক্রান্ত কম্বোডিয়ান বৌদ্ধদের জন্য ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার অনুদান ঘোষণা।
- বুদ্ধবাণী ও উপদেশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
- ধর্মীয় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন।