৮০০০০ টিরও বেশি কাঠের ব্লকে খোদায় করা কোরিয়ান ভাষায় ত্রিপিটক (কোরিয়ানা) জনসাধারনের জন্য উন্মোক্ত করতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
সবচেয়ে প্রাচীনতম এবং বিস্তৃত প্রচলিত গ্রন্থ ত্রিপিটকের এই কাঠের খোদাই করা সংস্করণ এই মাসের শেষের দিকে জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কোরিয়ার মন্দির পরিচালনা কমিটি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রিন্টিং করা কোরিয়ান ভাষার ত্রিপিটক গ্রন্থটি এই বছরই জনসাধানরণের জন্য পূর্ণাঙ্গ উন্মোক্ত করতে যাচ্ছে মন্দির কমিটি যা ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
ত্রিপিটক কোরিয়ানা (Kor: 대장경 대장경 [পালম্যান দায়েজংগিয়ং]) গ্রন্থটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ৮১২৫৮টি কাঠের প্রিন্টিং ব্লকের উপর খোদাই তৈরী করা হয়েছিল। প্রিন্ট করা কাঠের টুকরা গুলো এখন হেইন-সা (해인사) বৌদ্ধ বিহারে সংরক্ষিত আছে। হেইন-সা কোরিয়ান বৌদ্ধদের জন্য একটি প্রধান মন্দির ও একটি ধর্মীয় স্কুলও বটে। তাছাড়াও এটি দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার।
হেইন-সা এর এক প্রবীণ ভিক্ষু, জিং সুনিম বলেন, “অতীতে জাতীয় সঙ্কট কাটিয়ে উঠার আকাঙ্খা নিয়ে এটি তৈরি হয়েছিল এবং আমরা জাতি হিসেবে অনেকটা সফলও হয়েছিলাম, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে COVID-19 মহামারী দ্বারা উদ্ভূত বর্তমান জাতীয় দুর্দশা কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এবারও ভগবান বুদ্ধের মুখনিসৃত বাণী পবিত্র ত্রিপিটক গ্রন্থটি উন্মোক্ত করবো।”
এদিকে মন্দির কমিটি জানিয়েছে, ১৯ জুন থেকে প্রতি শনি ও রবিবার সকাল দশটায় এবং দুপুর ২ টায় পাবলিক ট্যুর উন্মোক্ত রাখা হবে। প্রতি ৫০ মিনিট পরপর ২০ জন করে দর্শনার্থী বা পূণ্যার্থী স্লট গুলো পরিদর্শনের জন্য সুযোগ পাবে। এই মহান পবিত্র গ্রন্থটি দর্শন করতে হেইন-সা-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনলাইন বুকিং দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে মন্দির কমিটি।
প্রাচীন পালি ত্রিপিটক বা পালি ক্যাননের চেয়ে ত্রিপিটক কোরিয়ানা অনেক বেশি বিস্তৃত কারণ এতে সংযোজন করা হয়েছে মূল্যবান অন্যান্য গ্রন্থ, কাহিনী। যেমন বৌদ্ধ পরিভ্রাজকগণের ভ্রমণ কাহিনী, সংস্কৃত এবং চীনা অভিধান এবং বৌদ্ধ ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য থের ও থেরীগণের জীবনী গ্রন্থ এবং অন্যান্য মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে।
৫২,৩৩০,১৫২ হানজা বা চীনা লোগোগ্রাম যুক্ত কোন প্রকার ত্রুটিহীন ৮১৩৫২ টি কাঠের প্রিন্টিং ব্লকে খোদাই করে তৈরী করা হয়েছে বইটি। ১২৩৭ সালে গিরিও সমরাজ্যের সময়কালে (৯১৮–১৩৯২) ত্রিপিটক কোরিয়ানা তৈরীর কাজ শুরু হয়ে ১২৪৮ সালে এর প্রিন্টিং কাজ সমাপ্ত হয়। কোরিয়ান সরকার ত্রিপিটক কোরিয়ানা বইটি ১৯৬২ সালে জাতীয় সংগ্রহাগারে সংরক্ষণ করে এবং ২০০৭ সালে ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়।
রাজা গোঞ্জাং (고종; r. 1213–59), যিনি এই কাজটির উদ্যেগক্তা ও পরিচালক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে ত্রিপিটক কোরিয়ানা গিরিও রাজ্য ও গিরিওবাসীকে সুরক্ষা দেবে এবং মঙ্গোল আক্রমণকারীদের তাড়িয়ে দেবে। ১২৩২ সালে রাজ্যটিতে মঙ্গোলিয়ান আগ্রাসনের সময় মূল ত্রিপিটক নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে, রাজা গোঞ্জাং সমবেদনা জানিয়ে কাঠের টুকরো গুলোকে পুনর্নির্মাণের আদেশ দেন। ত্রিপিটক কোরিয়ানায় ব্যবহৃত কাঠবাদামগুলি এখনো তৎকালিন বৌদ্ধ পণ্ডিতদের প্রজ্ঞা, সুন্দর মননশীলতা, যোগ্যতা, উচ্চ গুণমান এবং শৈল্পিক মননের পরিচয় বহন করে।
দীর্ঘ নয় বছর কাজ করার পর ২০০০ সালে, পুরো ত্রিপিটক কোরিয়ানা এর সংরক্ষণ বজবুত করতে ডিজিটালাইজড করার কাজ শেষ করা হয়েছিল। কাঠের টুকরো গুলো নষ্ট হয়ে গেলে ব্যাকআপ হিসাবে পরিবেশন করার জন্য তথ্যগুলো কপার প্লেটে পাঠ্য স্থানান্তর করার চেষ্টাও চলছে।
৮০২ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম নির্মিত তিনটি প্রধান বৌদ্ধ মন্দিরের মধ্যে একটি হিয়ান-সা। নির্মিত প্রত্যেকটি বিহার বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি অমূল্য রত্নের প্রতিনিধিত্ব করে। দক্ষিণ গিয়ংসং প্রদেশে নির্মিত টংডো-সা বুদ্ধ রত্ন, হেইন-সা ধর্ম রত্ন বা বৌদ্ধ শিক্ষার এবং দক্ষিণ জিওলা প্রদেশে নির্মিত সানগওয়ং-সা সংঘ রত্নের প্রতিনিধিত্ব করে।
আরো পড়ুন>>
- পরিত্রাণ প্রার্থনা পালি।
- মৈত্রী ভাবনা পালি।
- বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের উপর লেকচার।
- বৌদ্ধ সাহিত্যে চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ ভ্রূনতত্ত্ব।