গত মাসে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক শহরের অদূরে বিখ্যাত ত্রিরাশমি বৌদ্ধ গুহার কাছে আরো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গুহা আবিষ্কৃত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নতুন আবিষ্কৃত গুহাগুলো পুরাতন গুহাগুলোর তুলনায় অনেক ছোট তবে এগুলো যে হাজার বছরের পুরানো সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। প্রাপ্ত নতুন ছোট ছোট গুহাগুলো যেখানে পাওয়া গেছে তা আগে ঘন গাছপালা দ্বারা অস্পষ্ট ছিল।
ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সমীক্ষা (এএসআই) এর কর্মচারী সেলিম প্যাটেল ২২ শে মে পাহাড়ে গাছপালা পরিষ্কার করার সময় হোঁছট খেয়ে দুটি গুহা দেখতে পান। পরবর্বতীতে দেখা যায় মূলত সেখানে ৩টি গুহা যা প্রাচীন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আবাস্থল ছিল বলে ধারনা করা হয়।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে প্যাটেল বলেন,“আমি যখন হোঁছট খেয়ে পড়ে গেলাম বুঝতে পারলাম গর্তগুলো বেশ বড়। পরে গাছ পালায় ঢাকা গুহাগুলো পরিষ্কার করলাম। আমি দুটি গুহার মতো কাঠামো দেখেছি যা বিশাল পাথরকে খোদাই করে তৈরী করা ছিল। আমি তত্ক্ষণাত ঘটনাস্থলে থাকা আমার অফিসার শেন্দে স্যার সহ সিনিয়রদের জানিয়েছিলাম। এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে আমি শিহরিত। আমার ২৫ বছরের চাকুরি জীবনে এই প্রথম আমার সাথে এমনটা ঘটেছে।” (দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

শেন্দে বলেছেন, ”আমাদের টিম গুহাগুলি নথি ভুক্ত করবেন এবং আপাতত জনসাধারণকে সেই জায়গাটি দেখার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এখানে নিরাপত্তার জন্য পথ ও সুরক্ষা রেলিংয়ের অভাব রয়েছে।”
মুম্বাই ভিত্তিক ত্রিরাশমি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বুড্ডিজম, ইন্ডিক ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড স্ক্রিপ্টসের পরিচালক অতুল ভোসেকার প্রায় তিন দশক ধরে এই পাহাড়ের গুহাগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন। অঞ্চলটি দেখার পরে তিনি বলেন, “এই গুহাগুলি বর্তমান কমপ্লেক্সের বিপরীত দিকে এবং বর্তমান কমপ্লেক্স থেকে ৭০-৮০ ফুট উপরে রয়েছে। গুহাগুলি খাড়া পাহাড়ের বাইরে খোদাই করা হয়েছে। খোদাই করার ধরণটি দেখে মনে হচ্ছে এগুলি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আবাস ছিল।” নতুন আবিষ্কৃত গুহাগুলো বর্তমান কমপ্লেক্সের চেয়েও পুরানো হতে পারে বলে মিষ্টার ভোসেকার ধারনা করেন। (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)
নাসিকভিত্তিক প্রত্নতাত্ত্বিক অতুল ভোসেকরের মেয়ে মৈত্রী ভোসেকর বলেন, “এই গুহাগুলির বিন্যাস এবং আর্কিটেকচারের দিকে তাকালে বুঝা যায় সম্ভবত এগুলো বর্তমান গুহাগুলির আগেই খোদাই করা হয়েছিল; তবে বর্তমান গুহাগুলো এবং নতুন আবিষ্কৃত গুহাগুলোর ব্যপারে যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে তুলনা করার পরেই তাদের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা যেতে পারে।” (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

হিন্দুস্তান টাইমকে দেওয়া স্বাক্ষাতকারে অতুল ভোসেকার বলেছেন, ”যদি অঞ্চলটি আরও ভালভাবে জরিপ করা হয়, তবে আরও অনেক গুহা আবিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই অঞ্চলে আরও অন্তত ২-৩ টি গুহা থাকতে পারে যেগুলি এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। পুরো ত্রিরাশমি পর্বতটি একটি সঠিক উপায়ে স্ক্যান করা জরুরী।”
ভোসেকর বাবু পরামর্শ দিয়েছেন যে গবেষণার মাধ্যমে এই অঞ্চলে বৌদ্ধ গুহাগুলির কালানুক্রমকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা দরকার। এর মাধ্যমে মানুষ প্রত্নতাত্ত্বিক পরামিতি, ঐতিহাসিক রেকর্ড এবং অনুরূপ গুহাগুলির সাথে সহজে তুলনা করতে পারবে। তিনি বলেন, “যেমন নাসিকের নিকটে কানহেরি, পুনের কাছে কারলে-ভাজে এবং নতুন আবিষ্কৃত গুহাগুলো বিল্ডিংয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের প্রথম অনুমান, এই তিনটি গুহা অন্যান্য গুহাগুলোর আগেই নির্মিত হয়েছিল। এই গুহাগুলির সঠিক বয়স নির্ধারণের জন্য আমাদের একটি বিস্তৃত অধ্যয়ন এবং যথাযথ ডকুমেন্টেশন করতে হবে।”
বৌদ্ধলেণী গুহা (লেনি মারাঠি শব্দ যার অর্থ গুহা) নামে পরিচিত বিদ্যমান গুহাগুলো খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কালের বলে বিশ্বাস করা হয়। এগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯১৫ মিটার উপরে ত্রিরাশমি পাহাড়ে নির্মিত হয়েছিল। সর্বাদিক পরিচিত গুহাগুলো পাহাড়ের উত্তর-মুখী করে খনন করা হয়েছে। উত্তর-মুখী করার কারণ হলো সেখানে সূর্যের আলো, বাতাস ও বৃষ্টি দক্ষিন-পশ্চিম থেকে আসে। গুহা গুলো অজন্তা গুহা থেকে ২৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
আরো পড়ুন>>
- বুদ্ধের ঋদ্ধিবল প্রদর্শণ।
- মরণোত্তর দেহ দান করেছেন ভদন্ত শাসন রক্ষিত ভিক্ষু।
- অবৌদ্ধ ধর্মমত।
- ধর্ম রিয়েল্ম বুড্ডিস্ট ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়ায় স্নাতক কোর্সে ভর্তি চলছে।
- ৮০০০০ কাঠের ব্লকে খোদায় করে তৈরী হলো ত্রিপিটক।