আগামী ২৬মে ২০২১ শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ মহা সচিব এন্তনিও গুতেরেস UN অফিসিয়াল ওয়েভ সাইটে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন।
বার্তাটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপি লক্ষ লক্ষ বৌদ্ধদের নিকট ভেসাক (মে মাসের পূর্ণিমা) দিনটি সবচেয়ে পবিত্র দিন। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল এক বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে। পরবর্তীতে বুদ্ধ এই বৈশাখী পূর্ণিমাতেই বুদ্ধ জ্ঞান লাভ এবং পরিনির্বান প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
বার্তায় আরো বলা হয়, ১৯৯৯ সালের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ৫৪/১১৫ রেজোলিউশনের মাধ্যমে ভেসাক দিবসকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম যা আড়াই হাজারেরও বেশি সময় ধরে চলছে এবং মানবতার আধ্যাত্মিকতা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিবছর এই দিনটি জাতিসংঘ সদর দফতর, এর শাখা অফিস গুলোতে পালন করা হয়। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট মিশন দফতর গুলোতেও দিনটি পালন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
বার্তার পটভূমিতে বলা হয়, বুদ্ধের শিক্ষা, মমত্ববোধ, শান্তি এবং শুভেচ্ছার বার্তা লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে আছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ বুদ্ধের শিক্ষাকে অনুসরণ করে। ভেসাকের দিন বুদ্ধের অনুসারী তথা সমগ্র বিশ্ব বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞান অর্জন এবং মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করে।
১৯৮৬ সালের মে মাসে ভেসাক দিবস উলক্ষ্যে প্রাক্তন সেক্রেটারি-জেনারেল, জাভিয়ের পেরেজ ডি কুয়েলার বৌদ্ধদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছিলেন:
তিনি বলেছিলেন “বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে গৌতম বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞানার্জন এবং তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করার সময় মানবতার সেবার প্রতি তাঁর দেওয়া শিক্ষা, সহানুভূতি, সকল জীবের মঙ্গলকামনা ও নিষ্ঠার বার্তা উদযাপন করা সত্যিই একটি সম্মানজনক সুযোগ। বুদ্ধের শান্তির বার্তা বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে আগের চেয়ে সম্ভবত আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।”
জাভিয়ের পেরেজ ডি কুয়েলার আরো বলেছিলেন, “আমরা যদি আজকের পারমাণবিক যুগে শান্তি, বোঝাপড়া এবং মানবতার একটি দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করতে পারি তবেই দেশে দেশে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক জটিলতা ও বৈষম্যগুলো গুলোকে অতিক্রম করতে পারবো।“
তিনি যোগ করে বলেছিলেন“বুদ্ধের শান্তির দর্শনটি জাতিসংঘ সনদের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নিয়েছে এবং আমাদের সমস্ত চিন্তাভাবনা জুড়ে বুদ্ধের দর্শন ধারন করা উচিত, বিশেষত এই আন্তর্জাতিক শান্তির বছর চলাকালীন সময়ে আরো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত।”
বর্তমান জাতিসংঘ মহাসচিবের বার্তায় বলা হয়, “আমি বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ভেসাক পালনকারী বৌদ্ধদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমরা যেমন ভগবান বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞানার্জন এবং পরিনির্বাণ লাভাকে সম্মান করি তেমনি সকলেই তাঁর শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে পারি “
তিনি যোগ করে বলেন, সমস্ত মানব পরিবার আজ কওভিড-১৯ মহামারী সমস্যায় ভুগছে, আমাদের সেই সূত্রটি মনে করিয়ে দেয় যে: “যেহেতু সমস্ত প্রাণী আজ অসুস্থতার শিকার, তাই আমিও অসুস্থ”
করোনা মোকাবেলা প্রসংগে বলা হয়, “করোনা পরিস্থিতে এই বার্তাটি কোন নিদৃষ্ট সময়ের জন্য নয়। সেবা ও ঐক্যের জন্য এই বার্তাটি আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কেবল সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধ ও তা থেকে মুক্ত হতে পারি।”
বার্তার উপসংহারে বলা হয়েছে, “আসুন ভাসাক দিবসে, আমরা অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতির স্থাপনের মাধ্যমে এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ার নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভগবান বুদ্ধের প্রজ্ঞাময় দিনটি উদযাপন করি।”