সমগ্র বিশ্ব জুড়ে প্রভাবশালী ১০০ মহিলার তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। তালিকায় স্থান পেয়েছে ভারতীয় বৌদ্ধ নারী মঞ্জুলা প্রদীপের নাম।
সামাজিকভাবে নিযুক্ত বৌদ্ধ কর্মী মঞ্জুলা প্রদীপ একজন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং ভারতের সবচেয়ে বঞ্চিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।
বিবিসি প্রতি বছর বিশ্বের প্রতিটি দেশের সংগ্রামী, সামাজিকভাবে সক্রিয়, বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে জড়িত নারীদের কর্মকান্ড ও কৃতিত্ব বিশ্লেষণ করে এই তালিকাটি তৈরী করে। ২০২১ সালের ১০০ জন সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী এবং প্রভাবশালী নারীর একজন হিসাবে মনোনয়ন পান মঞ্জুলা প্রদীপ।
মঞ্জুলা প্রদীপ একজন ধর্মান্তরিত বৌদ্ধ (হিন্দু থেকে বৌদ্ধ), একজন মানবাধিকার আইনজীবী এবং একজন সামাজিক কর্মী। তিনিই প্রথম দলিত মহিলা যিনি নবসর্জন ট্রাস্টে যোগদান করেছিলেন। নবসর্বজন ট্রাস্ট হলো জাতি এবং লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্যের সমস্যা সমাধানকারী বৃহত্তম দলিত অধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি। পরে ২০০৪ সালে মঞ্জুলা নবসর্বজন ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক হন। তিনি মহিলা জাতীয় কাউন্সিলের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও।
মঞ্জুলা হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ভারতের “অস্পৃশ্য” দলিত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। মঞ্জুলর জন্মের পর তার পিতা তার মার সাথে চরম রাগ করে, কারন তার পিতা আশা করেছিল প্রদীপ একজন পুত্র সন্তান হবেন।
শিশু বয়সেই প্রদীপ ৪ জন পুরুষ দ্বারা যৌন নিগৃহের শিকার হয়েছিলেন। বড় হয়ে প্রদীপ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ভারতের ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষের সামাজিক সাম্য ও ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করতে অনুপ্রাণিত হন।
এক সাক্ষাতে প্রদীপ বলেন, “বিবিসি’র এই মনোনয়ন ভারতের সবচেয়ে বঞ্চিত সম্প্রদায়ের মহিলাদের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমি তাদের একজন। বিবিসি তালিকায় স্থান পেয়ে নিজেকে আরো বেশি সাহসী ও সত্যিকারের সামাজিক কর্মী বলে মনে হচ্ছে।”
বিগত ১২ মাসে বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম ও আলোচিত নারীদের থেকে ১০০ জনের তালিকা তৈরী করে বিবিসি। শুধু সংবাদ শিরোনাম নয় বিবিসি এই ক্ষেত্রে যেটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তা হলো- মনোনয়ন প্রাপ্তদের সমাজিক উল্লেখযোগ্য সাফল্য বা সামাজিক কর্মকান্ড।
বিবিসি তাদের এই তালিকা ঘোষণার সময় বলে, “এই বছর ১০০ জন আলোকিত মহিলা যাদের আমরা হাইলাইট করেছি তারা আমাদের সমাজ, আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের বিশ্বকে নতুন করে উদ্ভাবনে ভূমিকা পালন করেছে। তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই, সামোয়ার প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ফিয়ামে নাওমি মাতাফা, ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রকল্পের প্রধান অধ্যাপক হেইডি জে. লারসন এবং প্রশংসিত লেখক চিমামান্ডা এনগোজি আদিচি উল্লেখযোগ্য।”
সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিনোদন, খেলাধুলা, রাজনীতি, সক্রিয়তা এবং বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যে অবদান রাখার জন্য আফগানিস্তানের ৫০ জন নারী এই বছর বিবিসির বার্ষিক তালিকায় স্থান পেয়েছে।
এছাড়াও বিবিসির তালিকায় উল্লেখযোগ্য নারীদের মধ্যে রয়েছেন: আফগানিস্তানের মুকাদাসা আহমাদজাই, মেক্সিকোতে একজন প্রাক্তন গৃহকর্মী মার্সেলিনা বাউটিস্তা, যিনি গৃহকর্মীদের জন্য একটি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন; ক্যামেরুন জেন্ডার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেভিডজেম আর্নেস্টাইন লেইকেকি; মিয়ানমারের একজন গণতন্ত্রপন্থী কর্মী এইন সোয়ে মে; একজন ক্যাথলিক সন্ন্যাসী সিস্টার অ্যান রোজ নু তাওং এবং আফগানিস্তান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রথম মহিলা উপপ্রধান জালা জাজাই।
আরো পড়ুন>>
- থাইল্যান্ডে আটককৃত বৌদ্ধ ভিক্ষুর পরিণতি।
- আমেরিকায় ক্যাথলিক চার্চকে বৌদ্ধ বিহারে রূপান্তর।
- আমেরিকার বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিকাণ্ড।
- শমত ও বিদর্শন ভাবনা করার পূর্ণাঙ্গ গাইড।
- তথাগত উত্তরকরণীয়।
- মালুংক্যপুত্রের ১০টি প্রশ্ন।
- জাতক সমগ্র।