অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ধাম্মাসার নানস মনিসটারির প্রতিষ্ঠাতা, ভিক্ষুনী আজান ভামায়া গত ২০ নভেম্বর ৭০ বছর বয়সে মারা গেছন।
শ্রদ্ধেয়া ভামায়া ২০০৯ সালের 22 অক্টোবর 2009 ভিক্ষুনী ধর্মে দীক্ষিত হন। এর পর তিনিই সর্বপ্রথম অস্ট্রেলিয়ায় থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের প্রচারে এগিয়ে আসেন। তিনি পশ্চিমা বিশ্বে থেরবাদা ভিক্ষুনীদের উচ্চতর পদমর্যাদার একজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা দ্য অ্যালায়েন্স ফর ভিক্ষুনিস লিখেছে, “আমরা এটা জেনে দুঃখিত যে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত প্রথম ভিক্ষুনিদের মধ্যে একজন আজান ভায়ামা দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গেছেন। সে যেন কষ্ট থেকে মুক্তি পায় এবং সে যেন নির্বাণ লাভ করেন।”
শ্রদ্ধেয়া ভায়ামা সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর একজন সমাজকর্মী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ২৫ বছর বয়সে, তিনি শ্রীলংকা ভ্রমণ করেন, যেখানে তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষু নয়নাপনিকা’র সাথে দেখা করেন।
শ্রীলংকায় অবস্থানকালে তিনি বৌদ্ধধর্মীয় অনেক বই ও কাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করেন। পরে ভামায়া ক্যাথলিক নান মাদার থেরেসার কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কলকাতায় ভ্রমণ করবেন। কলকাতায় চলে আসার পরই তার মার ক্যান্সার ধরা পড়ে। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ভামায়া কালখেলাপ না করে দ্রুত ছুটে যান অস্ট্রেলিয়াতে। মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভামায়া তার যত্ন নেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যান।
১৯৮২ সালে শ্রীলংকান ভিক্ষু নয়ানাপনিকা আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত জার্মান ভিক্ষুনী ওয়াট বুদ্ধ ধম্মার এর প্রতিষ্ঠাতা আয়া খেমার মুখোমুখি হযন। ১৯৮৪ ভামায়া শ্রীলংকায় প্রতিষ্ঠিত আইয়া খেমার ভিক্ষুনী মনিস্টারিতে যোগ দেন।
তিনি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সাক্ষী হয়ে পরবর্তী ১০ বছর শ্রীলঙ্কায় কাটিয়েছিলেন। ভামায়র জীবনী লেখক, পিস উইকস ভায়ামা সম্পর্কে লিখেছেন:
”যুদ্ধের সময় সন্ন্যাসীরা সংঘর্ষের সাথে লিপ্ত উভয় পক্ষের লোকদের দ্বারা সমর্থিত ছিল। উভয় পক্ষ ভিক্ষু-ভিক্ষুনীদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন। সে সময় তিনি অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছিলেন যে সমস্ত জনগনের মধ্যে দুর্ভোগ ব্যাপক ছিল। তখন তিনি বুদ্ধের শিক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে দুঃখের শিকড় হলো- লোভ, ঘৃণা এবং মোহ। এই এই তিনিটি দ্বারা সকলে প্রভাবিত; কেউ এর থেকে বাদ নেই।” (পাটাচার ভিক্ষুনি আশ্রম)
শ্রীলঙ্কা ত্যাগ করার পর শ্রদ্ধেয়া ভায়ামা এক বছর ইংল্যান্ডের অমরাবতী মনিস্টারিতে আজান সুমেধোর নির্দেশনায় কাটিয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন। সেখানে তিন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বৌদ্ধ সোসাইটির আধ্যাত্মিক পরিচালক হিসেবে অবস্থান করেন। পার্থের বোধিনিয়ানা ভিক্ষুনী বিহারের পরিচালক অজান ব্রহ্মবমসোর অনুরোধে সেখানে তিনি ধম্মাসার বিহার উদ্বোধনের করেন।
২০০১ সালে তার বিশ্রামগারের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়াতে তিনি অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলেন। একই বছর ভামায়া অজান ব্রহ্মবমসোর প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে যোগ দেন। পরে অজান ব্রহ্মবমসোর প্রথম ১০ শীর্ষ শিষ্যদের একজন হয়েছিলেন। সেখান থেকে, তার ভিক্ষুনী সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
২০০৯ সালে বৌদ্ধধর্মের থেরবাদ ঐতিহ্যের আলোকে মহিলাদের ভিক্ষুণী হওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে যার নেতৃত্বে ছিলেন শ্রদ্ধেয়া ভায়ামা।
২০১১ সালে শ্রদ্ধেয়া ভামায় অসুস্থতায় পড়ার পর তিনি ধম্মাসরা ভিক্ষুণী মনিস্টারি প্রধান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বৌদ্ধ সোসাইটি ভামায়র জন্য একটি স্মরণ সভা অনুষ্ঠান ঘোষণা করে একটি বার্তায় বলেন-
এই মহান শিক্ষকের সম্মানে, BSWA(Buddhist Society of Western Australia) কমিটি ২৮ নভেম্বর, ২০২১, রবিবার বিকাল ৩ টায় ধম্মলোকা বৌদ্ধ কেন্দ্রে একটি স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এইদিন আমরা আজান ভায়ামাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেছি। তিনি ভিক্ষুণীদের জন্য যা করেছেন তা ভুলানর নয়, যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন তার দ্বার সাধারণ সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।
এমন এক মহা মানবীর প্রয়ানে বৌদ্ধ বার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা তার নির্বাণ সুখ কামানা করছি।
আরোপড়ুন>>
- অগ্রণী বৌদ্ধ স্কলার মাইকেল জেরিসন মারা গেছেন।
- বিখ্যাত বৌদ্ধ অনুবাদক থমাস ক্লিয়ারি মারা গেছেন।
- স্টিভ জবসের ধর্মীয় বিশ্বাস।
- আমেরিকার বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিকাণ্ড।
- পৃথিবীতে কত প্রকার মানব বাস করে।
- জ্ঞাতিগণের উদ্দেশ্যে পূণ্য দান।
- কঠিন চীবর দান উৎসর্গ।