বুদ্ধ যে প্রশ্নের উত্তর দেননি

শ্রাবস্তির মালুংক্যপুত্র বুদ্ধকে ১০টি প্রশ্ন করেছিলেন যে প্রশ্নের উত্তরে বুদ্ধ মৌনতা অবলম্বন করেছিলেন। মিলিন্দপ্রশ্ন নামক গ্রন্থে রাজা মিলিন্দ ভান্তে নাগসেনকে এই মৌনতা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। কেন বুদ্ধ মৌনতা অবলম্বন করেছিলেন। রাজা বলেন, হয়তো বুদ্ধ প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানতেন না অথবা উত্তর গোপন করেছেন।

তার প্রতি উত্তরে ভান্তে নাগসেন উদাহরণ সহ রাজা মিলিন্দকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নাগসেন ভান্তে ও রাজা মিলিন্দের প্রশ্নোত্তর পর্বটি হুবাহু উদৃত হলো।

“ভন্তে নাগসেন! ভগবান ইহাও বলিয়াছেন- ‘আনন্দ! ধর্ম সম্বন্ধে তথাগতের আচার্যমুষ্টি নাই।’ (অর্থাৎ আচার্যেরা শিষ্যদিগকে শিক্ষা দেবার সময় যেমন কিছু হাতে রাখিয়া শিক্ষাদেন বুদ্ধেরা সেরূপ না করিয়া সমস্তই উপদেশ করেন।) কিন্তু স্থবির মালুংক্যপুত্র কর্তৃক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর প্রদান করেন নাই।

ভন্তে? এই প্রশ্ন দুই দিকের মধ্যে একের অন্তর্গত হইবে হয়তঃ তিনি জানিতেন না, অথবা গোপন করিয়াছেন।

ভন্তে! যদি তিনি বলিয়া থাকেন যে ধর্ম সম্বন্ধে তাঁহার আচার্যমুষ্টি নাই, তাহা হইলে না জানার দরুণই স্থবির মালুংক্যপুত্রের প্রশ্নের উত্তর দেন নাই। আর যদি তিনি জানিয়া উত্তর না দেন, তাহা হইলে ধর্ম বিষয়ে নিশ্চয় তাঁহার আচার্যমুষ্টি ছিল।

ভন্তে! ইহাও উভয় কোটিক প্রশ্ন আপনার নিকট উপস্থিত হইল। আপনাকে ইহার সমাধান করিতে হইবে।“

“মহারাজ ভগবান যথার্থই বলিয়াছেন যে ধর্মোপদেশে তাঁহার আচর্যমুষ্টি নাই, আর এ কথাও সত্য যে মালুংক্যপুত্রের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের তিনি উত্তর দেন নাই। কিন্তু তাঁহা না জানা কিংবা গোপন করার দরুণ নহে।

মহারাজ! প্রশ্নের চারি প্রকার উত্তর হইতে পারে। সেই চারি প্রকার কি কি? (১) কোন প্রশ্নের একান্তভাবে (এক প্রকার সিদ্ধান্ত করিয়া) উত্তর দিতে হয়। (২) কোন প্রশ্নের বিভাগ-বিশ্লেষণ করিয়া উত্তর দিতে হয়। (৩) প্রশ্ন কর্তাকে প্রতিপ্রশ্ন করিয়া কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এবং (৪) কোন প্রশ্নের উত্তর স্থাপনীয় অর্থাৎ কোন উত্তর না দিয়া নীরব থাকিতে হয়।

  • মহারাজ কোন প্রশ্নের একান্তভাবে উত্তর দিতে হয়? এই জাতীয় প্রশ্ন-রূপ অনিত্য? বেদনা অনিত্য? সংজ্ঞা অনিত্য? সংস্কার অনিত্য? বিজ্ঞান অনিত্য?
  • কোন্ প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করিয়া দিতে হয়? এই জাতীয় প্রশ্ন- রূপ অনিত্য নহে কি? বেদনা অনিত্য নহে কি? সংজ্ঞা অনিত্য নহে কি? সংস্কার অনিত্য নহে কি? বিজ্ঞান অনিত্য নহে কি?
  • প্রতি প্রশ্ন করিয়া কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়? যেমন, চক্ষুদ্বারা সমস্ত জানা যায় নহে কি?—–
  • স্থাপনীয় প্রশ্ন কি? এই জাতীয় প্রশ্ন স্থাপনীয়- সংসার কি শ্বাশত? সংসার কি অশ্বাশত? সংসার কি অন্তবান বা অনন্ত কোনটাই নহে, তাহাই নহে কি? জীব ও শরীর কি এক? দেহ ও দেহী কি ভিন্ন? তথাগত মৃত্যুর পর থাকেন কি? তথাগত মৃত্যুর পর থাকেন না? তথাগত মৃত্যুর পর থাকে ও না থাকেন (উভয়বিধ) কি? তথাগত মৃত্যুর পর থাকেনও না, না থাকেনও না (উভয়বিধ নহে) কি?

মহারাজ! স্থবির মালুংক্যপুত্রের সেই প্রশ্ন স্থাপনীয় ছিল। সেই কারণে ভগবান ইহার উত্তর দেন নাই। কিন্তু সে প্রশ্ন কি কারণে স্থাপনীয়? যেহেতু তাহা প্রকাশের কোন হেতু বা কারণ অর্থাৎ প্রয়োজন ছিল না। এই প্রশ্নোত্তরে আত্মশুদ্ধি, দুঃখমুক্তি ও নির্বাণ শান্তির সহয়তা করে না। তজ্জন্য তাহা পরিত্যক্ত হইয়াছে। তজ্জন্য উহা স্থাপনীয়। ভগবান বুদ্ধগণ অকারণেও অহেতুক কোন বাক্য উচ্চারণ করেন না।”

“সাধু, ভন্তে নাগসেন! ইহা সেই রূপ, আমি তদ্রুপেই স্বীকার করিতেছি।”

আরো পড়ুন>>

 

বৌদ্ধ বার্তা

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!