বুদ্ধের ঋদ্ধি বল দর্শন

মিলিন্দপ্রশ্ন গ্রন্থের প্রথম বর্গের ১৫৯ পৃষ্টায় রাজা নাগসেন ভান্তে নাগসেনকে বুদ্ধের ঋদ্ধি বল প্রসংগে প্রশ্ন করেন। তিনি বুদ্ধের একটি উক্তিকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উত্তাপন করেন। নিচে মিলিন্দপ্রশ্ন গ্রন্থের কাহিনীট হুবাহু তুলে দেওয়া হল।

“ভন্তে নাগসেন! ভগবান ইহা বলিয়াছেন‘আনন্দ! তথাগতের চতুর্বিধ ঋদ্ধিপাদ ভাবিত, বহুলীকৃত, আয়ত্তীকৃত, উত্তমরূপে পরিশীলিত, অনুষ্ঠিত পরিচিত ও সুসমারব্ধ হইয়াছে। আনন্দ! যদি তথাগত ইচ্ছা করেন তবে তিনি কল্প পর্যন্ত অথবা কল্পের অবশিষ্ট কাল বাঁচিয়া থাকিতে পারেন।’

পুনরায় তিনি ইহাও বলিয়াছেন‘অদ্য হইতে তিন মাস পর তথাগত পরিনির্বাপিত হইবেন।’

ভন্তে! ভগবান যদি সত্যই বলিয়া থাকেন যে—- তিনি কল্প পর্যন্ত বা কল্পের অবশিষ্টকাল বাঁচিয়া থাকিতে পারেন, তাহা হইলে তিন মাসের সীমা নির্দেশ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আর যদি তিন মাস পরে পরিনির্বাণের কথা সত্য হয় তবে ইহা মিথ্যা প্রমণিত হয় যে তিনি—- কল্প পর্যন্ত— বাঁচিয়া থাকিতে পারেন। কেননা, বুদ্ধগণ অকারণে গর্জন করেন না। বুদ্ধ ভগবানগণ সত্যবাদী ও অবিরুদ্ধবাদী।

ভন্তে! ইহাও উভয়কোটিক প্রশ্ন আপনার সম্মুখে উপস্থাপিত হইয়াছে। ইহা গভীর সুনিপুণ ও ইহার মীমাংসা কষ্টসাধ্য। এই সম্বন্ধে আমার ভ্রান্তিজাল ছেদন করিয়া একাংশ স্থাপন করুন। পরকীয় মতবাদ ভেদ করুন।”

“মহারাজ! ভগবান উভয় বাক্য ঠিকই বলিয়াছেন যে‘আনন্দ!— পরিনির্বাপিত হইবেন।’ কিন্তু তিনি যে কল্প বলিয়াছেন উহা আয়ুকল্প।

মহারাজ! ভগবান নিজের বল-কীর্তনের উদ্দেশ্যে এইরূপ বলেন নাই। ভগবান ঋদ্ধিবলের প্রশংসা করিতে গিয়া এইরূপ বলিয়াছেন—।

মহারাজ! যেমন কোন রাজার শীঘ্রগামী, বায়ুগতিসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ অশ্ব আছে। রাজা উহার গতিবেগের প্রশংসা করিতে গিয়া নগর জনপদবাসী কর্মচারী, যোদ্ধা, ব্রাহ্মণ, গৃহপতি ও অমাত্যগণ মধ্যে এইরূপ বলেন,‘ইচ্ছা করিলে আমার এই শ্রেষ্ঠ অশ্ব সাগর জল পর্যন্ত পৃথিবী বিচরণ করিয়া ক্ষণ মধ্যে এখানে ফিরিয়া আসিতে পারে।’ আর যদিও সেই পরিষদে উহার বেগগতি প্রদর্শিত না হয় তথাপি তাহার সেই শক্তি আছেই। সেই ক্ষণমধ্যে সাগর-জল পর্যন্ত পৃথিবী অনুক্রমে বিচরণ করিতে সমর্থ হয়।

মহারাজ! এই প্রকারেই ভগবান নিজের ঋদ্ধিবল প্রশংসার ছলে এইরূপ বলিয়াছেন। তাহাও তিনি ত্রিবিদ্যা সম্পন্ন, ষড়ভিজ্ঞা সম্পন্ন, অর্হৎ ও নির্মল ক্ষীণাস্রবগণের এবং দেবমনুষ্যগণের মধ্যে উপবিষ্ট হইয়া ভাষণ করিতেছেন—–‘আনন্দ! তথাগতের চতুর্বিধ ঋদ্ধিপাদ ভাবিত সুসমারব্ধ হইয়াছে। আনন্দ, যদি বুদ্ধ ইচ্ছা করেন তবে কল্প পর্যন্ত বাঁচিয়া থাকিতে পারেন।’

মহারাজ! ভগবানের সেই ঋদ্ধি বল বিদ্যামান আছে। তিনি ঋদ্ধিবলে কল্প পর্যন্ত বা কল্পাবশেষ কাল বাঁচিয়া থাকিতে পারেন। কিন্তু তিনি সেই সভায় এই শক্তি প্রদর্শন করেন নাই।

মহারাজ! ভগবান সর্ববিধ ভবেব প্রতি নিরপেক্ষ হইয়াছেন। সর্ববিধ ভব-সংসার তথাগতের নিন্দিত। ভগবান ইহাও ভাষণ করিয়াছেনÍ‘ভিক্ষুগণ! যেমন স্বল্পমাত্র বিষ্টাও দুর্গন্ধজনক হয়, সেইরূপ ভিক্ষুগণ! আমি স্বল্পমাত্র ভবকে অন্তত পক্ষে অঙ্গুলির তুড়ি মারার সময়ের নিমিত্ত ও প্রশংসা করি না।’

কেমন মহারাজ! ভগবান সর্ববিধ (কাম, রূপ, অরূপ) ভব, গতি যোনিকে বিষ্টাবৎ দেখিয়া ঋদ্ধিবলের আশ্রয়ে সেই ভব সমূহের প্রতি ছন্দ রাগ উৎপদান করিবেন কি?”

“না, ভন্তে!”

“মহারাজ! তাহা হইলে ভগবান ঋদ্ধিবল প্রশংসা করিবার ইচ্ছায় এইরূপ বুদ্ধ-সিংহ-নাদ উচ্ছারণ করিয়াছেন।”

“সাধু ভন্তে নাগসেন! ইহা এইরূপ; আমি তদ্র পেই স্বীকার করিতেছি।”

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!