বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পাকিস্তানের বৌদ্ধ সম্প্রদায়

পাকিস্তানে বসবাস অবশিষ্ট্য বৌদ্ধ সম্প্রদায় গুলো বিলুপ্তি হতে চলেছে। সম্প্রতি সিন্ধু প্রদেশের নওশাহরো ফিরোজ জেলার গান্ধার প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছে বৌদ্ধদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। পরিদর্শনে দলটি যে দৃশ্য দেখেছে তাতে তাদের মনে হয়েছে, পাকিস্তানের শেষ অবশিষ্ট বৌদ্ধ সম্প্রদায়গুলি উপাসনার স্থান, ধর্মীয় শিক্ষক এবং সরকারী সহায়তার অভাবে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসলামাবাদের কাছে অবস্থিত তক্ষশিলা মিউজিয়ামে “Roots or Routes: Exploring Pakistan’s Buddhist and Jain Histories” শিরোনামে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দলটি পাকিস্তান ভিজিট করে।

প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছেন যে তারা প্রদর্শনী দেখে খুশি হলেও পাকিস্তানে বৌদ্ধধর্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

প্রতিনিধি দলের প্রধান লালা মুনির বলেন, ”পাকিস্তান বৌদ্ধ ধর্মের জন্য অনুকুল মনে হয়নি। আমরা এই স্থান পরিদর্শন করতে পেরে আনন্দিত, আমরা প্রদর্শনী আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। অথিতি হিসেবে যদিও আমরা সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা পেয়েছি এবং আমাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে কোন বাধার সম্মুখিন হইনি তবুও পাকিস্তানে বসবাসর বৌদ্ধরা তেমন ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। বৌদ্ধধর্ম বিভিন্ন কারণে বিলুপ্তির পথে” (Dawn)

পর্যটন এবং আন্তঃধর্মীয় ঐক্য ও সহনশীলতার উন্নয়নে ইউনেস্কোর সহযোগিতায় ৫ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত প্রদর্শনীটির আয়োজন করে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার।

মিস্টার মুনীর বলেন, যদিও পাকিস্তানে মোট বৌদ্ধ জনসংখ্যা কত সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি তবে  ঘোটকি, সংঘর, খাইরপুর, নবাবশাহ এবং নওশাহরো ফিরোজ সহ সারা সিন্ধু জুড়ে প্রায় ৬৫০ টি পরিবার বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে। বসবাসরত বৌদ্ধরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুশীলন করতে অক্ষম ছিল কারণ কোন ধর্মী প্রতিষ্ঠান বা বিহার নাই সেখানে। (Dawn)

Buddhist in Pakistan
পাকিস্তানের বাড়িতে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়ের করুন চিত্র।

বৌদ্ধ প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য, জুমানের ভাষায়, সেখানে তাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার মতো কোন ধর্মীয় ব্যক্তি বা ভিক্ষু নাই। তারা পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া পুরানো রীতিনীতি এবং তাদের কাছে সংগৃহীত সিন্ধি ভাষায় প্রকাশিত কয়েকটি বই এর উপর ভিত্তি করে তাদের আচার অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় কার্যাদি পরিচালনা করেন।

জুমান আশা করেন যে পাকিস্তান সরকার বা প্রাদেশিক সরকার সে দেশের বৌদ্ধদের জন্য একটি বৌদ্ধ মন্দির তৈরি করবে এবং ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু নিয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, ”দূর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কারনে বেশিরভাগ পাকিস্তানি বৌদ্ধরা কখনোই খাইবার পাখতুনখাওয়াতে, তক্ষশিলা বা অন্যান্য বৌদ্ধস্থানে কখনো যাওয়ার সুযোগ পাননি। তারা তাদের মূল সম্পর্কে অবগত নয়।”

প্রতিনিধি দলের সাথে তক্ষশিলার ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনকারী ১৮ বছর বয়সী বিতান্ত রাজ বলেন, “আমি প্রথমবারের মতো তক্ষশিলায় এসেছি এবং ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি দর্শন (চাক্ষুষ প্রমাণ) পেয়েছি।” প্রথমবারের মত রাজ সেই প্রাচীন স্থানটি দেখে আনন্দে আত্মহারা হয় যেখানে বৌদ্ধধর্ম একসময় সমৃদ্ধ হয়েছিল।

পাকিস্তানের বৌদ্ধদের অধিকাংশই সিন্ধু প্রদেশ এবং দক্ষিণ পাঞ্জাবের রোহি অঞ্চলে বসবাস করে। পাকিস্তানে বৌদ্ধদের সঠিক সংখ্যার তথ্যের অভাব রয়েছে। বসবাসকারী বৌদ্ধদের মধ্যে অনেকেই বৈষম্য, শারীরিক সহিংসতা এবং তাদের সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ করেছেন।

পাকিস্তানে বৌদ্ধ
তক্ষশিলার কাছে সিরকাপে একটি স্তূপ।

বাওরি বৌদ্ধদের স্থানীয় প্রতিনিধি এবং ম্যাট্রিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করা গ্রামের একমাত্র ব্যক্তি লালা রাজু রাম তার সম্প্রদায় সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ লোকের সিএনআইসি নেই (কম্পিউটারাইজড জাতীয় পরিচয়পত্র)। এটি ছাড়া কিভাবে আপনি কি কোনো নাগরিক অধিকার আশা করতে পারেন? পাকিস্তানে আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৬,০০০ জনেরও বেশি কিন্তু কাগজ-কলমে এই সংখ্যা অনেক কম।” (দ্য ফ্রাইডে টাইমস)

রাম আরও বলেন যে, “ভারতে যখন বাবরী মসজিদে মৌলবাদী হিন্দুরা হামলা করে তখন স্থানীয় বৌদ্ধ মন্দিরে চরমপন্থী মুসলমান প্রতিশোধমূলক হামলা করে সকল বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করে। বিশ্ববাসী জানে, এখানে বাহাওয়ালপুর শহরে অনেক হিন্দু মন্দির প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। তখন আমাদের বৌদ্ধ মন্দিরও ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এর পরে আমরা আর কখনও আমাদের মন্দির নির্মাণ করিনি। পার্শ্ববর্তী গ্রামের মুসলমানদের সাথে আমাদের ভালো এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি আমরা নতুন করে মন্দির বানালে আবারও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে এবং আমাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগাতে পারে। আমাদের প্রত্যেক বাড়িতে বুদ্ধের প্রতীক হিসেবে মুর্তি আছে। আমরা প্রতি বছর হোলি এবং দেওয়ালি উদযাপন করি। আমরা প্রতিবছর বাবা ঘুসাই-তে জড়ো হই— সেই জায়গা যেখানে প্রতি বছর আমরা আমাদের ধর্মীয় উৎসবগুলি পালন করি।” (দ্য ফ্রাইডে টাইমস)

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!