অগ্রণী বৌদ্ধ স্কলার মাইকেল জেরিসন মারা গেছেন

অ্যামায়োট্রফিক ল্যাট্রাল স্ক্লেরোসিসের (ALS) বিরুদ্ধে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করার পর অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে বিখ্যাত ত্যাগী বৌদ্ধ পন্ডিত মাইকেল জেরিসন (১৯৭৪-২০২১)। এই রোগটিকে Lou Gehrig’s disease-ও বলে। অনিচ্চা বত সাংখারা…।

Michael Jerryson
Michael Jerryson

গত ৯ জুলাই ৪৭ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জেরিসন ইয়ংস্টাউন স্টেট ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক ছিলেন, বিশেষত দর্শন ও ধর্মীয় স্টাডিজ বিভাগে তার কৃতিত্ত্ব সর্বাধিক। তিনি ওহিওর নিকটবর্তী হাওল্যান্ড টাউনশিপেই থাকতেন।

জেরিসন ১৯৯৬ সালে ম্যাডিসনের, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ্চাত্য দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আমেরিকায় স্ট্যাট পিস ক্রপ্স (United States Peace Corps)-এ যোগ দেন। সেখান থেকে চলে যান মঙ্গোলিয়ায়।

মঙ্গোলিয়ায় তিনি গোবি মরুভূমিতে ইংরেজী শিক্ষক হিসাবে যোগদেন এক কলেজে। তিনি ২০০১ সালে আবার ম্যাডিসনে ফিরে এসে পুনঃ উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এশিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মীয় স্ট্যাডিজে পিএইচডি করেন।

ধর্ম ও সহিংসতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, জেরিসন বৌদ্ধধর্ম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধর্মসমূহ এবং তুলনামূলক ধর্ম সম্পর্কিত নয়টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেন।

তিনি আমেরিকান একাডেমি অফ রিলিজিয়নে Comparative Approaches to Religion and Violence unit প্রতিষ্ঠা করেন। জেরিসন, তাইওয়ান ভিত্তিক গ্লোবাল বৌদ্ধ সংস্থা ফো গুয়াং শান- এর উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

Religion and Violence

তাঁর কয়েকটি প্রভাবশালী রচনার মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ ওয়ারফেয়ার (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস 2010), মার্ক জুয়ারজেন্সমিয়ার সাথে সহ-সম্পাদিত; If You Meet the Buddha on the Road: Buddhism, Politics, and Violence (Oxford University Press 2018); এবং Buddhist-Muslim Relations in a Theravada World (Palgrave Macmillan 2020)।

এছাড়ও তিনি মারগো কিটস এবং মার্ক জুয়ারজেনসায়ারের সাথে Violence and the World’s Religious Traditions (Oxford University Press 2016) এর সহ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন।

তিনি সমসাময়িক বৌদ্ধ ধর্মীয় অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুকের সম্পাদক (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ২০১৬) এর দায়িত্বও পালন করেছিলেন।



জেরিসনের অনেক প্রকল্প এবং আগ্রহ তাকে বিশ্বজুড়ে পণ্ডিত এবং ধর্মীয় নেতাদের সংস্পর্শে নিয়ে আসে, যাদের মধ্যে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

ব্রায়ান ল টুইট করেছেন, ”আমার কোন ধারণা ছিল না। আমি ডঃ জেরিসনকে ব্যক্তিগতভাবে কখনও জানতাম না, তবে আমি অবশ্যই তাঁর কাজ সম্পর্কে জানতাম। তিনি বৌদ্ধধর্ম এবং সহিংসতার মধ্যকার সম্পর্ক এবং বৌদ্ধ ধর্মের চ্যালেঞ্জিং আখ্যানকে একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম হিসাবে ডকুমেন্ট করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পণ্ডিত্য দেখিয়েছেন। তার মৃত্যুতে চরম ক্ষতি হয়েছে।

Bryan Law

লিন্ডসে হেলড্রেথ লিখেছেন, ”মাইকেল জেরিসন আমার কাছে একজন পরামর্শদাতার চেয়ে অনেক বেশি ছিলেন। তাঁর মহা প্রয়ান আমার হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। আমি তাকে চিনতে পেরে এবং তার দ্বারা পরিচালিত হতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে করছি।”



Study of Religion as an Analytical Discipline লিখেছে, “মাইকেল জেরিসন এর বিয়োগ হওয়ার সাথে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বৌদ্ধধর্ম ও সহিংসতা বিষয়ক এক যুগান্তকারী পন্ডিত ছিলেন। তিনি AAR’s Comparative Religion and Violence Program Unit এর সহ-প্রতিষ্ঠা ছিলেন।”

Study of Religion as an Analytical Discipline

মার্ক জুয়ারজেন্সমিয়ার  লেখেছেন, “মাইকেল জেরিসনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একাডেমিক জগৎ একজন মহান পণ্ডিতকে হারিয়েছে এবং আমি একজন ভাল সহকর্মী এবং বন্ধুকে হারিয়েছি। বৌদ্ধধর্ম এবং ধর্ম ও সহিংসতা সম্পর্কিত তাঁর কাজ দীর্ঘকাল ধরে থাকবে, যেমন তাঁর বৌদ্ধিক কৌতূহল এবং তার হাস্যরসের স্মৃতি। কি এক অসাধারণ লোক হারালাম।”

Mark Juergensmeyer

জেরিসন মৃত্যুকালে মা, তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান, পাঁচ ভাই এবং দুই বোন রেখে গেছেন। আগমী ১৭ ‍জুলাই সরকারি পরিষেবা অনুসরণ করে তার পরিবার একটি পারিবারিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা করছে।

যারা এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি তাদের মধ্য থেকে যারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চায় তাদের মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অংশ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছে।

ইয়ংস্টাউন স্টেট ইউনিভার্সিটি শ্রম দিবসের ছুটির পর (৪-৬ সেপ্টেম্বর) একটি স্মৃতি চারণ অধিবেশন করার পরিকল্পনা করছে। বিস্তারিত বিবরণী পরে ঘোষণা করা হবে।

আরো পড়ুন>>



বৌদ্ধ বার্তা

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!